1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
২ ইমামের কণ্ঠে মসজিদে হামলার শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা - খবর ২৪ ঘণ্টা
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

২ ইমামের কণ্ঠে মসজিদে হামলার শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৮ মারচ, ২০১৯

খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক:মসজিদে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ২০০ জন মুসল্লি। জুমআর নামাজের জন্য ইমাম জামাল ফাওদা বয়ান শুরু করেছিলেন মাত্র পাঁচ মিনিট আগে। মসজিদে হঠাৎ তিনটি গুলির শব্দ। এরপর সামনে বসে থাকা মুসল্লিরা দ্বিগ্বিদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন।

তিনি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলেন, হয়তো পাশের কিছু তরুণ খেলাধুলা করছে অথবা বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে; যেখান থেকে শব্দ আসছে। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর ও লিনউড মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি ও সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচার গল্প জানিয়েছেন দুই ইমাম জামাল ফাওদা এবং ইমাম আলাবি লতিফ জিরুল্লাহ।

ওই হামলার পর প্রথমবারের মতো কোনো গণমাধ্যম হিসেবে দেশটির ইংরেজি দৈনিক নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার কণ্ঠে উঠে এসেছে হামলাকারীর তাণ্ডব ও চোখের সামনে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যুর চিত্র।

জামাল ফাওদা বলেন, মুহূর্তের মধ্যেই মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। এবার ঘাতক সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। আলজেরীয় বংশোদ্ভূত এই ইমাম দেখেন এক বন্দুকধারী গুলি ছুড়তে ছুড়তে আসছে। এমন পরিস্থিতি মসজিদের জানালা ভেঙে লাফিয়ে দৌড় শুরু করেন তিনি।
ফাওদা বলেন, পরে গুলি আরো তীব্র আকার ধারণ করে। আক্রমণকারীর মাথায় হেলমেট,

চোখে চশমা ও শরীরে সামরিক বাহিনীর পোশাক। হাতে ছিল আধা স্বয়ংক্রিয় বন্দুক।
‘তখন মসজিদের ভেতরের লোকজন ভেঙে যাওয়া জানালার দিকে দৌড়াতে থাকেন। অধিকাংশ মানুষ এই জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। যে কারণে মসজিদের ডান পাশের অল্প কয়েকজন খুন হন। কিন্তু বাম পাশের মুসল্লিরা একজন আরেকজনের ওপর পড়ে যান। এভাবে তারা একটি স্তুপে পরিণত হন। এসময় হামলাকারী পাশে দাঁড়িয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।’

ফাওদা বলেন, মানুষকে মারতে বন্দুকধারী ধারাবাহিকভাবে একের পর এক কক্ষে যান। যখনই সে কোনো পাশ থেকে শব্দ পেয়েছে তখন সেই পাশে গিয়ে গুলি করেছে। সে ঠান্ডা মাথায় মানুষকে ঘিরে রেখেছে, বের হওয়ার শব্দ পেলেই সেদিকে ছুটে গিয়ে গুলি করেছে। সে শুধুই গুলি ছুড়েছে, গুলি ছুড়েছে, গুলি ছুড়েছে।

তিনি বলেন, এমনকি ধোঁয়ার জ্বালায় আমরা নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সর্বত্রই বুলেট উড়ছে। যখন আমরা বেরিয়ে আসলাম, তখন নিশ্চিত ছিলাম না যে সে চলে গেছে কি-না। কারণ সেখানে তখন নীরবতা ছিল। আমরা ধারণা করছিলাম, সে লুকিয়ে আছে, অপেক্ষা করছে…আমরা তাকে দেখতে পাইনি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।

‘সে ফিরে এল এবং আবার গুলি শুরু করল। যারা লুকিয়েছিল তারা বের হওয়ায় গুলির শিকার হলো। কারণ আমরা জানতাম না সে আবার আসছে। নিহতদের শরীরে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করেছে হত্যাকারী।’

যারা মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন তাদের অনেকেই পার্ক করে রাখা গাড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলেন। অনেকেই লাফিয়ে প্রাচীর পার হয়ে চলে যান। একজন মুসল্লি জরুরি নাম্বার ১১১-এ ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। হামলাকারী তাকে দেখে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। মসজিদের প্রধান কক্ষে অন্যান্যদের সঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন ফাওদা। এখানেই ৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

ইমাম বলেন, বন্দুকধারী জানতো না যে নারীরা আলাদা একটি কক্ষে লুকিয়ে আছেন। তারা বেঁচে গেছেন। তবে কয়েকজন নারী পালানোর চেষ্টা করেছেন। বন্দুকধারী দেখে ফেলায় তাদের গুলি করে হত্যা করে। ফাওদা বলেন, ‘এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি বেঁচে আছি।’

অবশেষে বন্দুকধারী নিজের গাড়িতে চড়ে শহরের অন্যপ্রান্তের লিনউড মসজিদের দিকে যায়। ওই মসজিদে গিয়ে এই বন্দুকধারী আরো কয়েকজনকে হত্যা করে।
লিনউড মসজিদের ইমাম আলাবি লতিফ জিরুল্লাহ। তিনি বলেন, মসজিদে সেই সময় প্রায় ৮০ জন মুসল্লি ছিলেন। ঘাতক বন্দুকধারী মসজিদের বাইরে গুলিবর্ষণ শুরু করে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে। মসজিদের বাইরে দম্পতিকে হত্যা করে সে। গুলিবর্ষণের সময় ইমাম জিরুল্লাহ মসজিদের ভেতরে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি দেখলাম যে মুসল্লিদের গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, তখন আমি মুসলিম ভাইদের বললাম, শুয়ে পড়ুন, শুয়ে পড়ুন। কেউ একজন মসজিদের বাইরে আমাদের ভাইদের হত্যা করছে।’

‘কেউই আমার কথা শুনল না। দুর্ভাগ্যবশত হামলাকারী পেছন দিক থেকে এসে জানালা দিয়ে আমাদের এক ভাইয়ের মাথায় গুলি করল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গুলি চালাতে থাকল। যখন জানালার গ্লাস ভেঙে গেল তখন সবাই শুয়ে পড়ল। সবাই বুঝতে পারল মেঝেতে শুয়ে পড়তে হবে।’

আব্দুল আজিজ নামের এক মুসল্লির সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসেন জিরুল্লাহ। তিনি বাইরে এসে একটি ক্রেডিট কার্ড মেশিন হাতে তুলে নিয়ে হামলাকারীকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে বলতে থাকেন, এদিকে আসো। তখন হামলাকারী তার গাড়ির দিকে দৌড়ে যায়। এ সময় আব্দুল আজিজ তার ক্রেডিট কার্ড মেশিন হামলাকারীর দিকে তাক করে পেছন পেছন দৌড় শুরু করেন।

বন্দুকধারী আবারো গুলি চালাতে শুরু করে। এসময় জিরুল্লাহ মসজিদের প্রধান দরজা বন্ধ করে দিয়ে মসুল্লিদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি যখন চলছে, তখন মসজিদের ভেতরে আজিজের ১১ ও ৫ বছর বয়সী দুই সন্তান ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। আজিজকে লক্ষ্য করে বন্দুকধারী গুলি চালায়; তিনি গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে পড়েন।
পরে বন্দুকধারীর একটি বন্দুক পান আজিজ। হাতে তুলে নিয়ে বন্দুকধারীকে লক্ষ্য করে

ট্রিগার চাপেন, কিন্তু বন্দুক ছিল ম্যাগজিন শূন্য। বন্দুকধারী আবারো গাড়ির দিকে ছুটে আসে, দ্বিতীয় বন্দুক হাতে তুলে নেয়। আজিজ বলেন, হামলাকারী গাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমি বন্দুকটি হাতে নিয়ে গাড়ির জানালা লক্ষ্য করে তীর ছুড়ে মারার ন্যায় নিক্ষেপ করি। সেটি গিয়ে বন্দুকধারীর জানালায় আঘাত হানে এবং জানালার গ্লাস ভেঙে যায়।
জানালার গ্লাস ভেঙে যাওয়ায় বন্দুকধারী কিছুটা ভয় পায় এবং গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে

যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বন্দুকধারী গালিগালাজ করে। সবাইকে মেরে ফেলবে বলে চিৎকার করে। পরে গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াতে থাকেন আজিজ। কিছুদূর যাওয়ার পর আজিজ ফিরে এলেও ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়ায় গাড়ি থেকে বন্দুকধারী ধরে ফেলেন দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা।

খবর২৪ঘণ্টা, জেএন

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST