1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
স্কুল পর্যায়ে রাজনীতি - খবর ২৪ ঘণ্টা
শুকরবার, ২৪ জানয়ারী ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন

স্কুল পর্যায়ে রাজনীতি

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

লীনা পারভীন: সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পুরাতন একটি বিষয়ে নতুন করে ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই সচেতন মহলে এ নিয়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে তর্ক। কী সেই ঘোষণা? সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্কুল পর্যায়ে তাদের সংগঠনকে বিস্তার করার ঘোষণা দিয়েছে যেখানে তারা উদ্দেশ্য হিসাবে বলেছে স্কুল ছাত্রদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেয়া।

এই যে স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের মাঝে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত সেটা কী এই উপমহাদেশের ইতিহাসে ছাত্রলীগই প্রথম ২০১৭ সালে এসে অনুধাবন করেছে? যারা একটু রাজনীতি সচেতন আছেন, যাদের কাছে রাজনীতি শব্দটি পুরাতন নয় বা যাদের সামান্য রাজনীতি বা ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা আছে তারা অবশ্য এতে অবাক হবেন বলে মনে করি না। কষ্ট করে যদি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের দিকে তাকানো যায় তাহলেই পাওয়া যাবে এমন প্রচুর উদাহরণ।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কিন্তু এমন প্রচুর স্কুলের ছাত্রদের আত্মত্যাগের ইতিহাস পাওয়া যায়। ক্ষুদিরাম বসুর নাম নিশ্চয়ই আমরা শুনেছি। কিছু না জানলেও অন্তত এটুকু জানি যে তিনি ছিলেন একদম কম বয়সী একজন বিপ্লবী যিনি বৃটিশদের বিরোধিতা করেছিলেন বলে হাসতে হাসতে ফাঁসীর কাষ্ঠে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়েছিলো। তাঁকে নিয়ে রচিত গানটা নিশ্চয়ই আমরা অনেকেই শুনেছি। সেই ক্ষুদিরাম বসু তার স্কুল জীবনেই জড়িয়ে পড়েছিলেন বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে। কতটা কঠিন দেশপ্রেম থাকলে একজন স্কুলের ছাত্র হয়ে পড়ে বিপ্লবী।

আচ্ছা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস কী পড়েছি আমরা? তিনিও কিন্তু স্কুলে থাকাকালীনই জড়িত ছিলেন রাজনীতিতে। আর তিনি স্কুল জীবনেই নিজেকে একজন দেশপ্রেমিক নেতা হিসাবে প্রমাণ করেছিলেন। আর তাঁর এই রাজনৈতিক সচেতনতাই তাঁর মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলীর জন্ম দিয়েছিলেন। এক বঙ্গবন্ধু না হলে কী আজকের বাংলাদেশ আমরা পেতাম?

কেবল বঙ্গবন্ধু কেন? আমাদের প্রগতিশীল বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাসেও কিন্তু রয়েছে স্কুল ছাত্রদের মাঝে সাংগঠনিক কর্মসূচী পরিচালনার ইতিহাস। একই ঐতিহ্য রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরও। তাই ছাত্রলীগের আজকের এই ঘোষণা ঠিক আচমকা নয়। আরেকটা তথ্য খুব গুরুত্বসহকারে জানা দরকার যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ড শুরু হয় স্কুল থেকেই। সেখানে থেকেই তারা নার্সিং করে গড়ে তোলে তাদের দলের ভবিষ্যত যোগ্য নেতাদের। সেখানে কখনও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আদলেও তারা বিস্তার করে আছে।

তাহলে প্রশ্ন আসে, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ইসলামী ছাত্র শিবির যদি আমাদের কোমলমতি সন্তানদের মগজে শুরু থেকেই দেশের প্রতি ঘৃণার বীজ বপন করতে শুরু করে তখন সেই জায়গাটিকে ফাইট করার মত কে আছে মাঠে? আমাদের অনেকেই এখন আফসোস করে বলি সমাজটা নষ্ট হয়ে গেছে। ভালোকিছু সব হারিয়ে গেল আমাদের মাঝ থেকে। আগেরকালে আমরা খেলাঘরের মত বিভিন্ন ধরণের ক্লাব বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতাম।

পাড়ায় পাড়ায় ছিলো বিতর্কের ক্লাব। স্কুল, কলেজের ছাত্ররা যুক্ত থাকতো সামাজিক কাজের সাথে যা তাদের মনন ও মগজে উন্নত চিন্তার জন্ম দিত। যদি সেটাই সত্য হয় তাহলে আজকের দিনে ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতন হতে অসুবিধা দেখছি কেন? বরং এই যে এতদিন চর্চাটা বন্ধ ছিলো তখন কী ছাত্ররা বসে ছিলো? তাদের মাঝে কী কোন চিন্তার লড়াই হয়নি? সেই জায়গাটি কে দখল করেছে? বিজ্ঞান বলে শুন্যতা বলে কিছু নেই।

প্রাকৃতিক নিয়মেই সেখানে কিছু না কিছু এসে ভর করে। তার মানে আমাদের কোমলমতি ছাত্রদের মগজেও কোন এক মতবাদ এসে জায়গা করে নিয়েছে। আর সেটাই হচ্ছে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের প্রাথমিক রূপ। ভালো কিছু চর্চা না থাকলে সেখানে খারাপটাই জায়গা করে নেয়। এখন কিন্তু সেটাই হচ্ছে। সেটা যে কেবল বিদ্যালয়ের ভিতরে গিয়ে করে তা নয়। যেখানেই সুযোগ আসে সেখানেই জায়গা করে নিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

বর্তমান বাংলাদেশে আমরা এক মারাত্মক অস্থিরতার মাঝ দিয়ে দিনাতিপাত করছি। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, দেশ, দেশপ্রেম, বঙ্গবন্ধু নিয়ে রয়েছে বিভক্তি। একটি বড় প্রজন্ম তৈরী হয়েছে যারা মনে করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ একটি অতীত ঘটনা যাকে মনে রেখে এখনকার বাংলাদেশ চলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু যে জাতির পিতা, কেন তিনি জাতির পিতা সে বিষয়েও তারা উন্নাসিকতা দেখায়। এসবের কারণ কী? কারণ সচেতনতার অভাব। রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাব। ইতিহাস, ঐতিহ্য, দেশ, আন্দোলন, প্রতিবাদ, শোষণ, বৈষম্য এসব শব্দের সাথে নেই তাদের পরিচয়।

বাংলাদেশের ইতিহাস মানে রাজনীতির ইতিহাস। একটি সমাজের পরিচয় নির্ধারিত হয় তার রাজনৈতিক আদর্শকে দিয়ে। অর্থনীতি, সমাজনীতি পরিচালিত হয় রাজনীতির আদর্শে। আর এই সুযোগটি পুরোপুরি ব্যবহার করছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। ছাত্রলীগ সহ, বাম রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন গুটিয়ে প্রায় রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। জাতীয় পর্যায়ে তাদের রাজনৈতিক আদর্শকে প্রচারের কর্মসূচীও রুটিনমাফিক।

স্কুলের ছাত্রদের মাঝে জানার আগ্রহ থাকে প্রচুর। তাদের মেধা ও মনন দিয়ে তারা দুনিয়াকে চিনতে চায়। জানার আগ্রহ জন্মায় ঠিক এই বয়সটাতেই। তাই এই বয়সের বাচ্চাদেরকে যদি সঠিক জ্ঞানের সন্ধান দেয়া যায় তাহলেই গড়ে উঠবে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। রাজনীতি মানে কিন্তু কেবল মিটিং মিছিল নয়। রাজনীতি মানে একটি আদর্শ। একটি সমাজদর্শন। রাজনীতি মানে সচেতনতা। রাজনীতি মানে বিশ্বাস ও জীবনচরিত, একটি দৃষ্টিভঙ্গী।

যে স্কুল ছাত্রটি তার জীবনের শুরুতেই জানতে পারবে তার জাতির জন্মের ইতিহাস, তার দেশটির জন্মের ইতিহাস তাহলেই সে বুঝতে শিখবে কেন আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের পার্থক্য আছে? কেন আমরা চাইলেই মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে যেতে পারি না, কেন আমেরিকার পতাকার সাথে আমাদের লাল সবুজের পতাকার রয়েছে বিস্তর পার্থক্য, কেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত থাকতে হবে।

একজন বঙ্গবন্ধুকে না জানলে, না চিনলে সে কেমন করে জানবে বাংলাদেশকে? কেমন করে জানবে দেশপ্রেম কাকে বলে? পড়াশুনা করার পাশাপাশি একজন নাগরিক হিসাবে রয়েছে এই দেশের প্রতিও আমার দায়িত্ব। আর সে দায়িত্ব শোধ করতে হলে সেটা করতে হবে এই দেশের মূলনীতির পথ ধরেই দেশের সেবা করে।

যারা বিরোধিতা করছেন তারা হয়তো ভাবছেন প্রচলিত অর্থে আমরা যে ছাত্র রাজনীতি দেখি সেখানে রয়েছে ক্ষমতা নিয়ে হানাহানি কাটাকাটি। ছাত্ররাজনীতির নামে চলে দলাদলির খেলা। কিন্তু সেটাকে কী আমরা রাজনীতি বলতে পারি? সেটা কখনই রাজনীতি নয় বলেই আমরা পেয়েছিলাম সূর্যসেন, প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, ক্ষুদিরাম বসু বা একজন বঙ্গবন্ধুর মত নেতাকে। আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসেও আছে স্কুল, কলেজের ছাত্রদের অবদান।

স্কুল পর্যায়ে সরকার গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ধারার প্রতি ছাত্রদের সচেতন করে তুলতে চালু করেছে নির্বাচনের। স্কুলে যদি নির্বাচন হতে পারে যেখানে স্কুলের ছাত্ররাই প্রার্থী হচ্ছে, নিজেরাই ভোটার হচ্ছে এবং নিজেরাই পরিচালনা করছে সমস্ত প্রক্রিয়াটি তাহলে সেসব ছাত্ররা কী রাজনীতি সচেতন হচ্ছে না? তারা কী তখন রাজনীতির বাইরে থাকে? অথচ, এ প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট ইতিবাচক হিসাবেই সাড়া ফেলেছে গোটা দেশে।

অর্থাৎ, স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের রাজনীতিতে যুক্ত হবার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেকেই নতুন করে শুনছেন বলেই নতুন মনে হচ্ছে বা ছাত্রলীগের প্রতি একধরনের নেতিবাচক ধারণার কারণেই এমন মন্তব্য বা আশংকা করছেন।

আগামীর বাংলাদেশকে স্বাধীনতা বিরোধী মতবাদ থেকে মুক্ত করতে হলে, ভবিষ্যত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হলে এ ধরণের গঠনমুলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। এখনকার স্কুলের ছাত্ররা কিন্তু ছোট বয়স থেকেই বৈশ্বিক হয়ে বেড়ে উঠে। তারা এখন অনেক বেশী সচেতন ও আধুনিক। তাই স্কুলে পড়ে বলেই তাদের মতামত গঠনের কোন জ্ঞান নেই এটা ভাবার কোন কারণ নেই।

বরং সেই মতামত গঠন প্রক্রিয়াটা যেন সঠিক, সচেতন ও দেশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে সেটা কাম্য। যে কোন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে হলে, বিশ্বশক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে প্রথমেই তার রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সুস্থির করতে হয়। বিতর্ক হতে পারে পরিচালনা প্রক্রিয়া নিয়ে কিন্তু দেশের অস্তিত্ব প্রশ্নে হতে হবে সবাইকে এক। দেশপ্রেমের শপথটা হতে হবে ইস্পাতসম।

আর সেই শিক্ষা দিতে হলে একটি বাচ্চাকে প্রথম পাঠ হিসাবে দেশকেই চেনাতে হবে। সেখানে অংশগ্রহণ থাকবে সবার। রাষ্ট্র থেকে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবজায়গাতেই দেশের প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে এগুতে হবে। তাই যে কোন উন্নত চিন্তার ঝাণ্ডাধারীদেরকে এগিয়ে যেতে দূর্বার গতিতে। ছাত্রলীগ নয় কেবল সেখানে অংশ নিতে হবে অন্যান্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকেও। এর সাথে কথা বলতে হবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদগুলোকে সচল করার বিষয়েও।

আমাদের মাঝে ‘বাংলাদেশ’ নিয়েই রয়েছে প্রচণ্ডমাত্রার বিভক্তি। এই বিভক্তিকে দূর করতে হবে যেকোন মূল্যে।

লীনা পারভীন: কলাম লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST