মাস্ক না পড়ার কারণে বৃদ্ধদের কান ধরে ওঠবস করানো যশোরের মণিরামপুরের
সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজ শনিবার সকালে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এই ঘটনার জন্য আমার দুঃখ প্রকাশ করছি।
এদিকে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধের কান ধরিয়ে ছবি তোলার ঘটনায় ফেসবুক জুড়ে
সমালোচনার ঝড় বইছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে যশোরের মণিরামপুরের
চিনাটোলা বাজারে এ ঘটনা ঘটান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে
যশোরের মণিরামপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)
সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার
বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে
অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এর মধ্যে
একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি
বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে
ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে
দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার
মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এছাড়া পরবর্তীতে অপর এক ভ্যানচলককে
অনুরূপভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
শুক্রবার রাতে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন অমানবিক
কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।
এ প্রসঙ্গে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ছবিটি আমি
দেখেছি। এটি তিনি করতে পারেন না। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের
কাজ নয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে শুক্রবার রাত ১১টার পর কয়েকবার ফোন করলেও মণিরামপুরের
সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) সাইয়েমা হাসানের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। শনিবার
সকালেও তার ফোন বন্ধ রয়েছে। তবে সমালোচনা শুরু হলে তিনি মনিরামপুরের
সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনে ভুল হতে
পারে। ঘটনাটি নিয়ে তিনি বিব্রত। ভুল হয়ে থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই
ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে)
সভাপতি সাজেদ রহমান ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, রাষ্ট্রের মালিকের
সাথে, রাষ্ট্রের কর্মচারীর আচরণ…কান ধরে ওঠবস করানো বৃদ্ধটি ভ্যানচালক।
নাম বললাম না। পেটের দায়ে সংসারের চাল-ডাল কিনতে এসেছিলেন যশোরের
মণিরামপুরের চিনাটোলা বাজারে। উপজেলার এসিল্যান্ড সাইমা হাসান জনসম্মুখে
তাকে কান ধরে ওঠবস করালেন। আবার মজার ঘটনা মনে করে তিনি ছবি তুললেন নিজের
মোবাইলে। এসিল্যান্ড দেশের সামান্য একজন কর্মচারী। এই ছবি দেখে আমি স্থির
থাকতে পারছি না। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।
সাজেদ রহমানের পোস্টটি শেয়ার করেছেন যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ
সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু। তিনি লিখেছেন, ‘সরকার ও প্রশাসনের
ভাবমূর্তি নষ্ট করছে অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ ও আমলা। এইসব বন্ধ করুন।’
যশোর জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শ্যামল কুমার শর্মা তার ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার
করে লিখেছেন, এই জন্যই আমাদের রক্ষক কিছু পুলিশ এবং কিছু সরকারি
কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মানুষ সমালোচনা করে। দয়া করে অতিউৎসাহী
হবেন না।
এদিকে সরকারি ওয়েবসাইটে সেই ছবি আপলোড করায় আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন ফেসবুক
ব্যবহারকারীরা। যশোর জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে মনিরামপুরের সমালোচিত সাইয়েমা
হাসানেরও কান ধরার দৃশ্যও এঁটে দিয়েছে হ্যাকাররা।