খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতি ডেস্ক: ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তবে এখানেই তাঁর পরিচয় থেমে নেই। তিনি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে উপমহাদেশের রাজনীতির অনেক পট পরিবর্তনের সাক্ষী প্রণব মুখার্জি। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে প্রণব মুখার্জির ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২’। এখানে নির্দিষ্ট সময়কালে উপমহাদেশের রাজনীতির বিভিন্ন উত্থান পতনের সার্বিক অবস্থা উঠে এসেছে। একই সঙ্গে এসব সংকট নিরসনে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকা প্রণব মুখার্জির বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানানো হয়েছে।
‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২’ এর একটি অধ্যায়ে বাংলাদেশে ওই সময়কার রাজনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী ও সেখানে প্রণব মুখার্জির উদ্যোগের কথাও উঠে এসেছে। বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য আজ এই বিষয়গুলোই তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশ ভারত শুধু প্রতিবেশীই নয়, একই সঙ্গে জাতিসত্ত্বা ও আত্মীয়তার বন্ধনে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ভারত সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। উন্নয়ন সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ-ভারত সবসময়ই অংশীদার।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতনের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের শেষদিকে, খালেদা জিয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল এবং পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখনই ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নেন। তবে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ।
ওই সময়ে সব উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক নেতাই বন্দী হন। ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনাকেও বন্দী করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে সবসময়ই আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ভারত, যার লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করা।
১৪ তম সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি আসেন ফখরুদ্দিন আহমেদ। ২০০৭ সালের নভেম্বর ভয়াবহ সাইক্লোনের পর একই বছরের ১ ডিসেম্বর আমি বাংলাদেশ সফর করি। আমি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে ভারতের সংহতির কথা জানাই।
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ ছয়দিনের জন্য ভারত সফরে যান। আমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে রাজনৈতিক কারণে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলি। শেখ হাসিনা মুক্তির হলে তিনি নিজের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বলে বোঝা যায়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলেও তাঁর অবস্থান যে নিরাপদ থাকবে এ বিষয়ে আমি তাঁকে নিশ্চয়তা দিই। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের হস্তক্ষেপ কামনায় আমি একটি সাক্ষাতের চেষ্টাও করি। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে, আমি সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করি এবং স্থিতিশীলতা পায় একটি জাতি। কয়েক বছর পর, ক্যানসার আক্রান্ত মঈন ইউ আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি আমি।
শেখ হাসিনা ছিল পরিবারের বন্ধু এবং যখন আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম, অবাধ ও সু্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর অব্যাহত চাপের মাধ্যমে ভারত তাঁকে (শেখ হাসিনা) সহায়তা করেছিল। এমনকি, শেখ হাসিনার কারারুদ্ধের সময়কালে তাঁকে ছেড়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের আমি বুঝিয়েছিলাম একজন ব্যক্তির বিপদের সময় তাঁকে ছেড়ে যাওয়া ঠিক নয়।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয় শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের দু’দেশ একযোগে কাজ করতে থাকে। ২০১০ সালে ভারত সফরে যান শেখ হাসিনা। যা ছিল বিভিন্ন কারণেই ঐতিহাসিক। ওই বছর আগস্টে ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির করতে আমি বাংলাদেশ সফরে যাই।
পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি সবসময়ই তুলনামূলক ভাবে বেশি বিরোধপূর্ণ। আর ইতিহাস বলে পূর্ববঙ্গের মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন অনেক বিপ্লবী। আর এটি দেশের মানুষের ওপর দীর্ঘসময় প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার আরেকটি বড় কারণ হলো দারিদ্র ও বেকারত্বের মতো মৌলিক সমস্যা সমাধানে সামরিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা।
খবর ২৪ ঘণ্টা.কম/জন