অভিযোগের শেষ নেই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। স্ট্যান্ড রিলিজ,বিভাগীয় মামলা ও মাদক সংশ্লিষ্টতাসহ অপরাধ মুলক কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের পাশে ।
এ নিয়ে আরএমপি জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
তবুও এসব পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুরে ফিরে বছরের পর বছর আরএমপিতে আছেন। মাঝে মধ্যে অপরাধ প্রমাণের পর সাময়িক শাস্তি হলেও থেমে থাকে না তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কাওকে জনস্বার্থে বদলি করা হলেও অলৌকিক শক্তিতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই তা অমান্য করছেন এমন অভিযোগ আছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত থাকার সুবাদে এসব পুলিশ কর্মকর্তারা মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্ম, অনিয়ম ও অপরাধের অন্তহীন অভিযোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ভুমিকা এখন নানা প্রশ্নের মুখে।’
এছাড়াও পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (এআইজি) স্বাক্ষরিত বদলির আদেশ অথবা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) সংক্রান্ত ‘আইনবহির্ভূত অভিযোগ আছে আরএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ‘
পুলিশ সদর দপ্তর (ঢাকা) প্রজ্ঞাপনে একাধিক কর্মকর্তা স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ার পরেও কিসের শক্তিবলয়ে তারা আরএমপি ছাড়ছে না? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো আরএমপিতে।
ওই সকল অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এতো বিস্তর অভিযোগ তবুও ব্যবস্থা গ্রহন না করায় চরম চাপা-ক্ষোভ পুলিশের মাঝে।
সুত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরের স্ট্যান্ড রিলিজের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আরএমপিতে বহাল রয়েছেন তারা হলো:(আরও)’রিজার্ভ অফিসে কর্মরত বর্তমানে এএসআই মাসুদ তার বদলি হয় শিল্পায়ন পুলিশে, (আরও) রিজার্ভ অফিসে কর্মরত এএসআই রহিদুল ইসলামের বদলি হয়েছে সিলেট রেঞ্জে,কাটাখালির মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) দীপ্ত তা বদলি জনিত কর্মস্থল রংপুর রেঞ্জ,এসআই আমিনুল ইসলাম আছেন মতিহার থানায় তার বদলির আদেশের কর্মস্থল এন্টি-টেররিজম ইউনিট ঢাকা, কাটাখালি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পলাশ তার বদলির আদেশের কর্মস্থল ডিএমপিতে।
এরা সবাই পুলিশ হেডকোয়াটার্স ঢাকার বদলির আদেশ ভঙ্গ করেছেন এক থেকে দুই বছর পুর্বেই। এদের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টার অভিযোগে প্রশাসনিক কারনে বদলির আদেশ দেন।
তবুও নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন নাই তারা। তাই তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হন তারা।
তাদের বিরুদ্ধে আরএমপির বিভিন্ন থানা এলাকায় চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা,অপহরণ,খুন ছিনতাই, নির্যাতনসহ মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়াসহ প্রচুর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে । এদের সবার আমলনামায় স্ট্যান্ড রিলিজসহ বিভাগীয় মামলাও আছে। তবুও তারা সিনিয়র কর্মকর্তার আশীর্বাদ মাথায় করে আরএমপিতে ‘মধু’ সংগ্রহ করছে।
এদিকে, চলতি মাসে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (এআইজি) জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি আদেশে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ পরিদর্শক বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে ১৮-০৯-২০২২ তারিখের মধ্যে ছাড়পত্র গ্রহণ করবেন। অন্যথায় ১৯-০৯-২০২২ খ্রি: থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হয়েছেন বলে গণ্য হবেন।
সদ্য স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া এই কর্মকর্তার নাম পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) সাইফুল ইসলাম। তার নতুন কর্মস্থল এপিবিএন। সে-ও এখনো আরএমপিতে বহাল। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে আরএমপির মোটরযান শাখা থেকে লাখ লাখ টাকা লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ।
সুত্রটি আরো জানায়,’আরএমপির আরো কিছু পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এ ইউনিটেই রয়েছেন। আর এখানে থাকার সুবাদে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। এদের মধ্যে কেউ কেউ অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এরপরে তারা সিনিয়র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে
অর্থ বাণিজ্য শুরু করেন। তাদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন আরএমপিতে থাকার সুবাদে তারা স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে মাদক কেনাবেচায় সহায়তা করছে ও আটক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদের মধ্যে অন্যতম এএসআই নাসির তিনি বর্তমানে আরএমপির রাজপাড়া থানায় কর্মরত রয়েছে। নাসিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা আছে চলমান। সে ডিবি পুলিশে কর্মরত থাকা কালিন সময়ে এসআই সেলিমের টিমে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে মহানগর ডিবির এই টিমটি আটক বাণিজ্যের শীর্ষে ছিলেন।
‘এসআই (নিঃ) উত্তম কুমার রায়, তিনি পুলিশ কন্সটেবল পদে ২০০৫ সালের ৭ আগস্ট চাকুরীতে যোগদান করেন। এরপর এএসআই পরে পদন্নোতি পেয়ে এসআই (নিঃ) হন, প্রায় ১৫ বছর ধরে আরএমপিতে আছেন তিনি। দীর্ঘ দিন একই স্থানে চাকরির সুবাদে সিনিয়র অফিসারদের ছত্রছায়ায় সে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তার নামেও বিভাগীয় মামলা রয়েছে। বর্তমানে শাহমুখদুম থানায় কর্মরত আছেন তিনি।’
এসআই (নিঃ) মো.গোলাম মোস্তফা চাকুরী জীবনের প্রায় ১ যুগ সে আরএমপিতে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন বোয়ালিয়া থানায় কর্মরত থাকার সুবাধে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।’
এসআই (নিঃ) আব্দুল মতিন পুলিশে কন্সটেবল পদে যোগদান করেন ২০০৫ সালে এরপর এএসআই থেকে এসআই পদে পদোন্নতি পান ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর। পদোন্নতি পাওয়ার কিছুদিন পর তিনি আবারও আরএমপিতে ফিরেন। চাকুরী করেন চন্দ্রিমা থানা ও পরে বোয়ালিয়া থানায় যোগদান করেন।
ওইসময় বোয়ালিয়া মডেল থানার বিতর্কীত ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনের খুব আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে মতিন ওসি নিবারনের ছত্রছায়ায় আরো ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেন। ওসি নিবারন ও এসআই মতিনসহ থানা পুলিশের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওই সময়ে স্বর্ণের বার কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠে। অভিযোগ রয়েছে,মতিন মাদক সংশ্লিষ্টতায় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে অল্প সময়েই অনেক সম্পদের মালিক বনে যান।
তার বিরুদ্ধে পাঁচটি বিভাগীয় মামলার মধ্যে ৩টি চলমান আছে। এসআই মতিন বতর্মানে শাহমুখদুম থানায় কর্মরত আছেন।
এছাড়াও টিএসআই মনিরুল ইসলাম মনিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ মাদক সংশ্লিষ্টার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ‘
‘অন্য দিকে আটক বাণিজ্যের অন্তহীন অভিযোগ রয়েছে বেলপুকুর থানায় কর্মরত এএসআই বকুলসহ আরএমপিতে কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।’
অপর একটি সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,আরএমপি পুলিশের কর্মকাণ্ড ও অসাধু পুলিশ সদস্যদের বিষয় নিয়ে কাজ করছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।’
এর আগে,আরএমপির অসাধু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ‘খবর২৪ঘন্টা’ ধারাবাহিক খবর প্রকাশ করে। খবরের জেরে এবার পুলিশের খোদ কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সোচ্চার । ‘
‘খবর২৪ঘন্টায়’নাম প্রকাশ না করা শর্তে খোদ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য থেকে শুরু করে অনিয়ম আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হচ্ছে “আরও (১) অফিস। এখানে কর্মরত আছেন “আরও(১) অমর কুমার সরকার।
কনস্টেবল থেকে এসআই পযর্ন্ত কোথায়, কখন, কিভাবে ছুটি,যোগদান, বদলি, স্ট্যান্ড রিলিজসহ অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্রের সকল আমলনামা দেখভাল করেন অমর কুমার সরকার। পুলিশ সদস্যদের আমলনামানুযায়ী এই অফিসে চলে ঘুষের বাণিজ্য’।
“আরও (১) অমর কুমার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আরএমপিতে কর্মরত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের আমলনামা সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবহিত করেন না! তিনি ঘুষ বাণিজ্যর মাধ্যমে ফাইলগুলো ধামাচাপা দিয়ে রাখেন দিনের পর দিন।
খোদ কর্মকর্তারা জানান, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুরো আরএমপি জুড়ে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন । ‘এতে লাভবান হচ্ছেন ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক দাবি খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদের। সেই সাথে আরএমপির শৃঙ্খলা ফেরাতে সিনিয়র কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম ওসি এমটি সাইফুল ইসলামের স্ট্যান্ড রিলিজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাকে আগের কর্মস্থল থেকে সরিয়ে রেঞ্জে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,অন্য পুলিশ সদস্যদের স্ট্যান্ড রিলিজ বিষয়টি জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। চলবে….
বিএ/