খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: ভারতের নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম নিয়ে অভিযোগ পুরোনো। তবে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে সেটা তুঙ্গে উঠেছিল। এনিয়ে বাগ্যুদ্ধে জড়ায় কংগ্রেস ও বিজেপি জোটের নেতারা।
অবশ্য ভোট শেষ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই ভোটে অনিয়মের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ হালে পানি পেয়েছে। লোকসভার ১১৯টি আসনে ‘ভুতুড়ে’ ভোটের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে দ্য কুইন্ট নামের একটি ওয়েবসাইটের বিশ্লেষণে।
ভোটার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের ১১৯টি আসনে প্রদত্ত ভোট এবং ইভিএমে গোনা ভোটের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। নির্বাচন কমিশনের অবশ্য জানিয়েছে, প্রদত্ত ভোট এবং ইভিএমের ভোটের মধ্যে কোনো গরমিল নেই।
কয়েকজন সাবেক নির্বাচন কমিশনারের মতে, এই ধরনের অভিযোগ এলে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।
ওই ওয়েবসাইটটি প্রদত্ত ভোটের ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ করেছে কমিশন এবং বিহার ও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে। ভোটের শতাংশের হিসাব জোগাড় করেছে ‘ভোটার টার্নআউট অ্যাপ’ এবং রাজ্যগুলোর ওয়েবসাইট থেকে। তথ্য বিশ্লেষণে পোস্টাল ব্যালটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এতে দেখা যায়, কোনো লোকসভা কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের তুলনায় ইভিএমে গণনা হওয়া ভোটের সংখ্যা বেশি, আবার কোথাও এর বিপরীত চিত্র।
এবার পাটনা সাহিব ছিল আলোচিত কেন্দ্র। সেখানে বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের শত্রুঘ্ন সিনহা পরাজিত করে। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণ, ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২১,৩৬,৮০০ জন। ভোট প্রদানের হার ৪৩.১ শতাংশ অর্থাৎ ভোট পড়েছে ৯,২০,৯৬১টি। কিন্তু ইভিএমের গণনায় দেখা গিয়েছে ভোট পড়ছে ৯,৭৮,৬০২। অর্থাৎ ইভিএমে ৫৭,৬৪১টি ভোট অতিরিক্ত গণনা হয়েছে।
একই চিত্র পূর্ব চম্পারণ, পশ্চিম চম্পারণ, সেওহর, বাল্মীকি নগরের মতো একাধিক কেন্দ্রে। চার হাজার থেকে আট হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়পরাজয় নির্ধারিত হওয়া বিহারের ১৭টি আসনে অতিরিক্ত ভোটের তথ্য সামনে এসেছে।
বিহারের কারাকাট, সাসারাম, জাহানাবাদ, পাটালিপুত্র, বক্সার এবং আরা কেন্দ্রে দেখা গিয়েছে, প্রদত্ত ভোটের তুলনায় ইভিএম-ভোট বেশ খানিকটা কম। যেমন, কারাকাট আসনে প্রদত্ত ভোট ৯,৬২,৭২১ এবং ইভিএমে গণনার পর ভোটের সংখ্যা ৮,৬৪,৫০৭।
এখন প্রশ্ন উঠছে তা হলে কি অনেক ভোট গণনা হয়নি? যদিও ওই কেন্দ্রগুলোতে প্রদত্ত ভোট এবং ইভিএমে গণনা ভোটের ফারাকে জয়-পরাজয় হেরফের হচ্ছে না। ওই ছয়টিই আসনেই জয়ী হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ প্রার্থীরা। জাহানাবাদে আবার তিন জায়গায় তিন রকম তথ্য দেখা যাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী ৬২টিতে। অন্তত ৫০টি আসনে অতিরিক্ত ভোটার রয়েছে বলে ওয়েবসাইটটির দাবি। লখনউয়ে বিজেপির রাজনাথ সিংহ জয়ী হয়েছেন ৩,৪৭,৩০২ ভোটে। সেখানে ভোটার ২০,৩৮,৭২৫ জন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ৫৩.৫৩ শতাংশ অর্থাৎ ১০,৯১,৩২৯টি ভোট পড়ছে। কিন্তু ইভিএমের গণনায় দেখা যাচ্ছে, ভোট পড়ছে ১১,০৭,১০০টি।
মথুরা, বাগপত-সহ একাধিক আসনে একই ছবি। অনেক জায়গায় অতিরিক্ত ভোট নয় হাজারেরও বেশি। শাহজাহানপুর, রামপুর, আগরার মতো আসনগুলোতে প্রদত্ত ভোটের তুলনায় ইভিএমের ভোট কম।
এ প্রসঙ্গে সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলির কোর্টে যাওয়া উচিত।” সাবেক দুই প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এইচ এস ব্রহ্ম এবং এন গোপালস্বামীর মতে, বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য কমিশন।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য ওই অভিযোগ খারিজ করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটে ভোটদানের ‘সম্ভাব্য সংখ্যা’ থাকে। সামগ্রিক পরিসংখ্যান মেলার পরেই তা ওয়েবসাইটে আপলোড হয়। ফলে ‘ভুতুড়ে ভোটার’ বলে কিছু নেই, ভ্রান্ত অনুমানের ভিত্তিতে এসব বলা হচ্ছে।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন