বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আ’লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা
হওয়ার পর থেকে মেয়র প্রার্থী লিটন শুভেচ্ছা পোস্টার টানিয়ে নগরের ওলি গলি পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। কারণ রাসিক নির্বাচনে তিনি আ’লীগের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন এটা নিশ্চিত ছিল। তবে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বুলবুলের কোন পোস্টার দেখা যায়নি। আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিল আ’লীগ সমর্থিত এই মেয়র প্রার্থী লিটন। বিএনপির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ড মিটিংয়ে আ’লীগ- যুবলীগ নেতাকর্মীদের এমনও বক্তব্য দিতে শোনা গেছে যে, এবার যে করেই হোক লিটনকে মেয়র পদে বসাতে হবে। এ জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হবে।
নির্বাচনী তফসিলের পর মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ হয়। যদিও প্রতীক বরাদ্দের আগে থেকেই বিএনপি-আ’লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার ও হ্যান্ডবিল প্রস্তুত ছিল। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর মধ্যরাতেই আ’লীগ সমর্থিত মেয়র প্রাথীর নৌকা প্রতীকের পোস্টারে ছেয়ে দেওয়া হয় রাজশাহী মহানগর। তারা নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কোন জায়গা
অন্য প্রার্থীর জন্য ফাঁকা রাখেনি। যার ফলে অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পোস্টার ও ফেস্টুন নিয়ে বেকায়দার মধ্যে পড়ে। একক প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে যায় রাজশাহী। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল দুপুরের আগে কেউ প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে পারবে না। নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে মূলত পোস্টারগুলো লাগানো হয়। বিকেল থেকে মেয়র প্রার্থী বুলবুলের লোকজন পোস্টার লাগাতে গিয়ে লিটনের নেতাকর্মীর কাছে বাধার সম্মুখিন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন কোন স্থানে মারধরের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
এদিকে, দেশের খুলনা ও গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল দেখে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা বিএনপি রাসিক নির্বাচনে প্রার্থী দেবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। যার কারণে তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এ জন্য এখনো প্রচারে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। হঠাৎ করেই নির্বাচনে এসে অগোছালো অবস্থায় পড়েছে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বুলবুল।
কিন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর বিএনপি নেতাদের মান ভাঙ্গিয়ে প্রচারণায় নামাতে সমর্থ্য হন এই নেতা। কারণ এখন ভোট হয় দলীয় প্রতীক নিয়ে। এটি হবে দলীয় প্রতীকের হারজিত। এ জন্য বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাই মান ভেঙ্গে নির্বাচনী
প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেওয়ার সময় রাসিক নির্বাচনকে বিএনপি কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে মান ভেঙ্গে বিএনপির অনেক নেতাই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। তারা এটিকে বিএনপির অস্তিত্ব হিসেবে দেখছেন। কারণ রাজশাহী বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। তাই এ এলাকায় দলীয় প্রার্থীকে আবার ভোটারের মন জয় করে রাসিকের নগরপিতার আসনে দেখতে চাই নেতারা। ১১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচারণা শুরু হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে
বিভিন্ন অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছে। আ’লীগ প্রথমে অভিযোগ না করলেও পরে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া শুরু করে। এনিয়ে শুরু হয় অভিযোগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। দুই পক্ষ থেকেই অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া অভিযোগগুলো নিয়ে তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে উত্তেজনা ততই বাড়ছে দুই পক্ষের মধ্যে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন নগরবাসী। তফসিল ঘোষণার আগে যেভাবে রাতের বেলা মানুষকে বাইরে দেখা যেত এখন আর তেমনভাবে দেখা যায় না।
নগরের সচেনতন নাগরিকরা বলছেন, ২০০৮ সালে বর্তমান আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হেনস্তা করলেও এবার তার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দুই পক্ষই মরিয়া হয়ে উঠেছে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য। ইতমধ্যেই বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরসহ প্রচারণা চালানো মহিলাদের ভিডিও করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে তারা শক্তি প্রদর্শন না করলেও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কি হতে পারে তা বলা যায় না।
অন্যদিকে, রাসিকের ৩, ১৪, ১৩, ১৯, ২১, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের আ’লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা জোর করে হলেও কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হবেন বলে ঘোষণা করছেন অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা এমন অভিযোগ করেছেন খবর২৪ঘণ্টা.কমের কাছে । এ কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা আরো বেশি আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন।
২১ নং ওয়ার্ডের মুনিরুল নামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ভোটের আগেই যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে যেকোন সময় বড় ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। সরকার দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজনরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একরকম জোর করেই ভোট দাবি করছেন। এড়াও অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীর কয়েক যুবক কে মিথ্যা মামলা ভাসিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
২৩ নং ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা রাফি বলেন, এবার ভোটে যে কি হবে তা বলা মুশকিল। কারণ দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এতে আমরা সাধারণ মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে পড়েছি।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন