নিজস্ব প্রতিবেদক :
সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতী, কারচুপি, ভোট ডাকাতী , জুলুম নির্যাতন এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার মহানরগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের আয়োজনে বিএনপিনগরীর মালোপাড়াস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এিনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু।
অন্যদের মধ্যে ছিলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, মতিহার থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল হক মিন্টু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল হক রানা, বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, জেলা যুবদলের সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানী সুমন, মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন রিমন, সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রেজা রিপন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকবর আলি জ্যাকি, নাহিন আহম্মেদ, জেলা ছাত্রদলর সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আমান বিপুল ও মহিলা নেত্রী গুলশান আরা মমতা সহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতী করে দলীয় প্রার্থী এ.এইচ.এম খায়রুজ্জমানকে বিজয়ী করেছে। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন নাই। তিনি জনগণের নেতাও নন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী পুলিশ লীগ, প্রিজাইডিং ও পোলিং লীগ এবং প্রশাসনলীগ মিলে আগের রাতেই নৌকা প্রথীকে সীল মেরে রেখেছিল। ভোটের দিনের তারা সন্ত্রাস করে বেলা ১০ থেকে ১১টার মধ্যে প্রতিটি সেন্টারে মেয়র ব্যালট পেপারে নৌাকার সীল মেরে নেয়। ১০টার পরে কোন ভোট সেন্টারে আর কোন মেয়রের ব্যালট পেপার ছিল না বলে জানান তিনি। এইভাবে গণতন্ত্রকে বলি দিয়ে নির্লজ্জ বেহায়ার মত ভোট জালিয়াতী করে মেয়র হওয়ায় এখন লিটন আর জনসমক্ষে মুখ দেখাতে পারছেন না। বিঝয় সরকার দলীয় প্রার্থীর হয়নি। হয়েছে ধানের শীষের। প্রতিটি পাড়া, মহল্লা, বাজার ও বিভিন্ন মোড় এলাকায় এখন একটাই কথা সরকার গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। এই সরকারের অধিনে কোন প্রকার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আর হতে পারেনা বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তপু।
অন্যান্য বক্তরা বলেন, এই জালিম সরকারের অধিনে কোন নির্বাচন আর নয়। এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যাকরে দেশকে একনায়কতন্ত্রে পরিণত করেছে। পুলিশ বিভাগ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিণীর সদস্যরা নিজেদের পেশাদারিত্ব ভূলে সরকার দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করে তাদের আসল চেহারা জনসমক্ষে উন্মোচন করেছে। এখন প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীসহ এই অবৈধ সরকারকে জনগণ আরো বেশী করে ঘৃনা করতে শুরু করে। তারা আগামী সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী জানান। সেইসাথে এই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দেন তারা।
সভাপতির বক্তব্যে বুলবুল বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সিটি নির্বাচনের আইনশৃংখলা বাহিনী, প্রশাসন এবং দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশন এবং রাজশাহী রিটার্নিং অফিসারের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপে রাজশাহী সিটি নির্বাচন মারাত্বকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের সমর্থকদের সাথে পাল্লা দিয়ে পুলিশ নৌকায় ভোট দিয়েছে। জনগণকে ভোট প্রদান করতে দেয়নি। কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি’র কোন এজেন্টকে কোন বুথে থাকতে দেওয়া হয়নি। অনেক কেন্দ্রে প্রবেশও করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীর নিজশ্ব লোক প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদের কোন গেজেট বিএনপিকে এখনো দেওয়া হয়নি বলে জানান বুলবুল। তিনি আরো বলেন, ১ থেকে ৩০ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত একই কায়দায় ভোট ডাকাতী করা হয়েছে। সকল কেন্দ্রেই আগে থেকেই মেয়রের ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ছেলেরা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। সময়ের পূর্বেই ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভোটারগণ ব্যালট পেপার না পেয়ে হতাশায় ফিরে যায় এবং সরকারকে তিরস্কার করতে থাকে। বুলবুল আরো বলেন, বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজে তিনি নিজে ভোট ডাকাতী ধরেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে ব্যালট পেপার দেখাতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার সময় থেকে মেয়রের ব্যালট পেপার শুন্য হয়ে যায়। সেখানকার ভোটরগণ ইচ্ছানুযায়ী ভোট দিতে না পেরে রাগে ক্ষোভে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান বলে বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, এই সরকার দর্নীতির, জালিয়াতি ও নির্যাতনেরসীমা ছাড়িয়ে গেছে। পায়ের তলায় মাটি নাই বুঝে ভোট ডাকাতী করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করছে।
রাজশাহীর মেয়র শহরটাকে বদলাতে চেয়ে পোস্টার লিফলেট করেন। তবে সত্যিই তিনি রাজশাহীর পরিবেশ বদলে দিয়েছেন। তিনি ভোট ডাকাতী করে জনগণের মতমাতকে উপেক্ষা করে মেয়র হয়ে জনগণের ঘৃনার পাত্রেও পরিণত হয়েছেন। তিনি কোনদিন মাথা উঁচু করে নেতাগীরি আর করতে পারবেনা। কারণ ভোট ডাকাতদের জনগণ কখনো ভাল চোখে দেখবে না এবং তাদের নেতা বলেও মানবেনা বলে তিনি জানান। বর্তমান মেয়র জনগণের নিকট একজন জালিয়াত, ভোটচোর ও নিকৃষ্ট নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন বুলবুল। তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী দেন।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে