নিজস্ব প্রতিবেদক :
বেসরকারী ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে পুনরায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে চিকিৎসা নেওয়ার আকুতি জানিছেন ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হাতুড়ি পেটায় পা ভেঙ্গে যাওয়া তরিকুল ইসলাম। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার আমাকে যখন ছাড়পত্র দেওয়া হয় তখন পাশে কোন সহপাঠি ছিলো না। আমি চিকিৎসককে বললাম আমার অবস্থা এখনো ভাল নয়। আমাকে আরো কিছুদিন থাকতে দিতে। কিন্তু তারা কোন কথা না শুনে তড়িঘড়ি করে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।
পরে সহপাঠিদের খবর দেওয়া হলে তারা এসে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার সহপাঠিদের জানায়, এখন আর কোন সমস্যা নেই। ১৫ দিন পর আসতে হবে। কোন সমস্যা হলে তখন সেটি দেখা হবে।
আমি বার বার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে চাইলেও তারা সেদিকে কর্ণপাত করেন নি।
আমি বাইরের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছি। আমার অবস্থা খুব ভাল নয়। আমার আর্থিক সংকট রয়েছে। তাই বাইরে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমি পুনরায় হাসপাতালে ফিরে চিকিৎসা নিতে চাই। আমাকে যাতে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমি এখনো নড়াচড়া করতে পারছিনা। তাহলে কিভাবে আমি সুস্থ্য?সহপাঠি মঞ্জুরুল আলম বলেন, ছাড়পত্র দেওয়ার সময় আমি ছিলাম না। পরে আমরা এসে ডাক্তারকে বললে তারা জানান, ছুটি দেওয়া হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নেই। ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে। তবে ছাড়পত্র পুলিশের হাতে দেওয়া হবে। পরে তারা পুলিশকে ছাড়পত্র দেয়। পুলিশের মাধ্যমে তারা হাতে ছাড়পত্র পেয়ে বাইরে নিয়ে এসে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
পা ভেঙ্গে যাওয়া তরিকুলের ছোট বোন ফাহিমা বলেন, আমাদের পারিবারিক সমস্যা আছে। বেসরকারী ক্লিনিকে টাকা খরচ করে বড় ভাইয়ের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য বলে ছাড়পত্র দেওয়া হলো। তারপরও আজ বিভিন্ন ধরণের ৭টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। তাহলে কিভাবে ভাইয়া সুস্থ্য হলো। কিসের অপরাধে আমাদের হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি করে ছুটি দেওয়া হলো তা বুঝতে পারছিনা। খুব কম সময়ের মধ্যে যাতে ভাইয়াকে আবারো হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে ভালভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।
হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর বেসরকারী ক্লিনিকেে এসব টেস্ট করা হয়।
বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হাতুড়ি পেটায় পা ভেঙ্গে যাওয়া তরিকুল নগরীর লক্ষীপুর এলাকার একটি বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি আছেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। গত ২ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কারের দাবিতে পতাকা মিছিলের সময় তাকে একা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে।
পরে আহতবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ না হতেই তাকে অজ্ঞাত কারণে ৫ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে ছুটি দেওয়া হয়। তারপর তাকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে এখন আর তরিকুলের সমস্যা নেই। তরিকুল বর্তমানে বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি আছে তার অবস্থা ভাল নয় এবং তরিকুল আবার হাসপাতালে ফিরে চিকিৎসা নিতে চায় এমন কথা জানালে পরিচালক বলেন, আমি শনিবার বিভাগীয় প্রধানের সাথে কথা বলবো। প্রয়োজন হলে তাকে আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে