নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মচারী পরিচয়ে কাজ করছে প্রায় অর্ধশত বহিরাগত। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বহিরাগতরা। কারণ এসব বহিরাগতরা হাসপাতালে রোগী আসা মাত্রই কর্মচারী পরিচয়ে তাদের ভাল চিকিৎসা দেওয়ার নাম করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া আসা ও অন্যান্য কাজ করে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন নিয়োগ বা কর্তৃপক্ষের তালিকাতে নাম না থাকলেও রামেক হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয়ে কাজ করছে এসব বহিরাগত। ট্রলিম্যান, ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনার পরিচায়ে তারা হাসপাতালে কাজ করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। রোগি বা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করে থাকে এইসব বহিরাগতরা। যাদের কারণে বিভিন্ন সময় হাসপাতালে চুরিসহ নানা ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে রোগি ও তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে রোগি ও তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোন ও স্বর্ণলঙ্কার চুরির সঙ্গে জড়িত এসব বহিরাগতরা বলেই অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জনবল সরবরাহ ঠিকাদারের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দেয় প্রতি বছর। এসব কর্মচারী ঠিকাদারের মাধ্যমে মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন। এর বাহিরে আরো ৫০ থেকে ৬০ জন বহিরাগত হাসপাতালে কাজ করছে। যাদের কোন তালিকা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
সূত্র জানায়, জনবল সরবরাহ ঠিকাদার, জামাদার এদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় গোপনে এসব বহিরাগতরা হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ করে নিয়েছেন।
বহিরাগতদের মধ্যে কিছু রয়েছে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। যারা হাসপাতালে রোগী অসা মাত্রই নিজে টিকিট কেটে দিয়ে তাদের ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর তারা টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়। তবে সবশেষে টাকা দিয়েই পার পেতে হয় রোগীর লোককে।
ওয়ার্ডেও রয়েছে কর্মচারী পরিচয়ে বহিরাগত। যারা রোগীদের ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে দিয়ে পার্সেন্ট নেয়। এরা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল হিসেবেও কাজ করে থাকে।
কম টাকার টেস্টও বেশি টাকায় করিয়ে নেয়। এদের দৌরাত্ম্য শুধু জরুরী বিভাগ বা ওয়ার্ডে তাই নয়। এরা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ওটিতেও কর্মচারী পরিচয়ে রোগীদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এতকিছুর পরও দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কর্মচারী পরিচয়ে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না তাদের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালে ৩১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে ফরিদুল নামের এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, আমি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসা মাত্রই ট্রলি নিয়ে এসে আমাকে টিকিট কেটে দেওয়া সহ যাবতীয় কাজ করে দেন। পরে আমাকে ওয়ার্ডেও নিয়ে যায়। এরপর আমার কাছ থেকে দুইশত টাকা দাবি করে। আমি না দিতে চাইলে হুমকি দেয়। ভয়ে আমি তাকে টাকা দিয়ে দিয়েছি।
এদিকে, সরজমিনে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, এসব কর্মচারী পরিচয়দানকারী বহিরাগতরা পুলিশের সামনেই রোগীদের নিয়ে যাওয়া আসা করলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না।
বহিরাগতদের সাথেই এসব বহিরাগতদের খোশ গল্পও করতে দেখা গেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, হাসপাতালে দালাল ধরাতে পুলিশের কোন কর্মকান্ড দেখা যায় না। বরং তারা এদের সাথেই গল্প করে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, আমি ছুটিতে আছি। হাসপাতালে ফিরে কথা বলবো।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে