বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক : প্রায় চার বছর পর ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমাবর্তন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন । এর আগে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি-অনুপস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বেশ কয়েকবার স্থগিত হয় বহুলপ্রত্যাশিত এ অনুষ্ঠান। তবে আগের ৯টি সমাবর্তনের তুলনায় এবারের আয়োজনটি অনেক বেশি জাকজমকপূর্ণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের ।
বহুল প্রতীক্ষিত এ সমাবর্তনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই মধ্যে বর্ণিল সাজে সেজেছে রাবি, সবকিছুতেই খোলস পাল্টে নতুনত্বের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে, যেন তারুণ্য ফিরে পাচ্ছে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশমুখ গুলো থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট আর স্থাপনা গুলোতে সে প্রস্তুতির চিহ্নও স্পষ্ট। রাস্তা সংস্কার শেষে বর্তমানে স্থাপনা গুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের রঙ-তুলি ও অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। নিরাপত্তা রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং নেয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যামিরেটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজউদ্দীন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এই সমাবর্তনে প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার বা ডি.লিট. ডিগ্রী প্রদান করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য খ্যাতিমান শিল্পীরা।
এদিকে, সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এমন এক জমকালো সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন নিবন্ধনকৃত ছয় হাজারের বেশি গ্রাজুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তনে আরও বেশকিছু চমক থাকছে। সেই চমক নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।
এদিকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করছে এমন গ্রাজুয়েটের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী জানান, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিনের সময়ে দশম সমাবর্তনের নিবন্ধন শুরু হয়। ওই সময়ে মোট পাঁচ হাজার ২৭৫ জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেন। এরপর তার মেয়াদ শেষ হলে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান আবারও সমাবর্তনের নিবন্ধনের তারিখ ঘোষণা করেন। এতে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি, এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি অর্জনকারীদের নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। সমাবর্তনে অংশ নিতে মোট ছয় হাজার নয়জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন।
কোন অনুষদ থেকে কত জন:
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলা অনুষদ থেকে ১১৪১ জন, আইন অনুষদ থেকে ২২৫ জন, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ থেকে ৯৫১ জন, বিজ্ঞান অনুষদ থেকে মোট ৯১৬ জন শিক্ষার্থী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ১০৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।
এদিকে, জীব ও ভূবিদ্যা অনুষদ থেকে ৫৬১ জন, প্রকৌশল অনুষদ থেকে ৩০১ জন, কৃষি অনুষদ থেকে ৭৭ জন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ৩ জন এবং আইইআর থেকে ৫৩৪ জন এবং আইক্যাক থেকে ১৪৫ জন এবং চারুকলার ৩০১ জন শিক্ষার্থী এবারের সমাবর্তনে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্ট্যাডিজ থেকে পাঁচজন, পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে আটজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন সমাবর্তনে।
প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আইডি কার্ড নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের ভিতরের অস্থায়ী দোকানগুলো আপাতত তুলে দেয়ার দেয়া হয়েছে। সমাবর্তন শেষে আবারো চালু হবে সেগুলো
এর আগে, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।