রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মেয়েদের জন্য নির্ধারিত টয়লেট ও কমনরুমের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ হাজার ছাত্রী অধ্যয়নরত, অথচ তাদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩৫টি টয়লেট। ফলে, অনেক সময় বাধ্য হয়ে ছেলেদের টয়লেট মেয়েদের ব্যবহার করা লাগে। সৃষ্টি হয় প্রয়োজনীয় প্রাইভেসির অভাব। ব্যক্তিগত পরিচর্যার সময়েও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এছাড়া বিদ্যমান টয়লেটগুলোর নানা অব্যবস্থাপনাতো রয়েছেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনে ১১টি বিভাগের ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন এই ভবনে ক্লাস করে এক হাজারেরও বেশি ছাত্রী। কিন্তু তাদের জন্য নির্ধারিত কমনরুম রয়েছে মাত্র দুইটি এবং টয়লেট সংখ্যা মাত্র চারটি। বাকি ১০টি অ্যাকাডেমিক ভবনের অবস্থাও প্রায় একই।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ছাত্রী ক্লাস করেন। এই ভবনের তৃতীয় তলায় একটি মাত্র কমনরুম রয়েছে, যেখানে টয়লেট আছে তিনটি। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের একটি কমনরুমে রয়েছে দুটি টয়লেট। ড. মমতাজ উদ্দীন ভবনের একটি কমনরুমে তিনটি এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের একমাত্র কমনরুমে রয়েছে মাত্র একটি টয়লেট।
ছাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ টয়লেটের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে ন্যাপকিন পরিবর্তন বা ব্যক্তিগত পরিচর্যার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রয়োজনীয় প্রাইভেসির অভাবও তাদের জন্য এক বড় সমস্যা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সময়-সীমার বাধা—বিকেল ৪টার পর অধিকাংশ কমনরুম ও টয়লেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, যদিও অনেক বিভাগের ক্লাস চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে ক্লাস শেষে টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলেও তা সম্ভব হয় না, যা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য চরম অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাদের দাবি, এই সংকট কেবল দৈনন্দিন ব্যবহারগত সমস্যাই নয়, বরং তা নারীদের স্বাস্থ্য, স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। দ্রুত টয়লেট ও কমনরুমের সংখ্যা বাড়ানো, সময়সীমা পুনর্বিবেচনা এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তারা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন সেবা বলেন, আমাদের রবীন্দ্র ভবনে ১০ টিরও বেশি বিভাগের ক্লাস হয়। কিন্তু কমন রুম আছে মাত্র ২ টা। এতে করে জরুরি মূহুর্তে সিরিয়াল লেগে যায়, অনেক সময় নষ্ট হয়৷ কমনরুমে ২ টা ওয়াশরুম আছে। এগুলোও বেশির ভাগ সময় নোংরা থাকে। ওয়াশরুমের ভিতর জায়গা কম থাকায় ন্যাপকিন চেঞ্জ করাটা অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে ভ্যান্টিলেশন ব্যবস্থা নেই, দুর্গন্ধ থাকে এবং ময়লা ফেলার ঝুড়িও প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয় না।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শৈলী মুত্তাদি বলেন, কমনরুম নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে তারা ক্লাসের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে, ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে কিংবা শারীরিক অসুস্থতায় কিছুক্ষণ নিরিবিলি থাকতে পারে। এটি শুধু আরামদায়ক পরিবেশই নয়, বরং স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করার একটি জরুরি স্থান। কিন্তু কমনরুমের সংখ্যা এতই কম যে, জায়গা পাওয়া যায় না। অনেক সময় দরজা বন্ধ থাকে, আবার কখনও ঠিকমতো পরিষ্কারও করা হয় না। আমরা চাই, প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত ও ব্যবহারযোগ্য কমনরুম থাকুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুব রহমান বলেন, প্রতিটি ভবন তৈরি করার সময় সে ভবনে কতোটি কমনরুম থাকবে, তা তখনই ঠিক করা হয়। এখন নতুন করে কমন রুম তৈরি করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ এবং বাজেটের ব্যাপার। যদি ফ্যাকাল্টি প্রস্তাব পেশ করে, তাহলে আমি বাজেট পাশ করানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আমাদের কুদরত-ই-খুদা ভবনে নতুন করে কমনরুম তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দভাবে কমনরুম ব্যবহার করতে পারে এবং তারা খুবই খুশি। এভাবে যদি প্রতিটি ভবনের কর্তৃপক্ষরা উদ্যোগ নেয়, তাহলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
বিএ..