ওমর ফারুক :
রাজশাহী অঞ্চলে গত একবছরে নারী-পুরুষসহ ২৩৩ জন আত্মহত্যা করেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১ বছরে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। আত্মহত্যার মত জীবন নাশকারী মারাত্মক এই প্রবনতা যেন বেড়েই চলেছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে, সংসারে অভাব-অনটন, পরকিয়া প্রেম ও যুবক-যবতীদের পছন্দমত বিয়ে না দেওয়াসহ নানা কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার মত মারাত্মক ঘটনাগুলো। গত বছরের তুলনায় এ বছরে নারী-পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী-পুরুষের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করা নারী-পুরুষদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ছেলেদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং মেয়েদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এছাড়া কিছু কিশোরীও রয়েছে এই তালিকায় যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। আবার বয়স্ক মানুষও রয়েছে আত্মহত্যার তালিকায়।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পহেলা জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১ বছরে ২৩৩ জন নারী-পুরুষ শুধুমাত্র রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। নারী ও পুরুষরা প্রধানত দুই ভাবে আত্মহত্যা করে থাকেন। আত্মহত্যার একটি ধরণ হচ্ছে গলায় ফাঁস ও আরেকটি হচ্ছে বিষপানে আত্মহত্যা। তবে হারপিক পান ও ঘুমের ওষুধ সেবনেও আত্মহত্যা করে থাকে কিছু মানুষ।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যত মানুষ মারা গেছেন এর মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছেন ৪৩ জন এবং বিষপান করে মারা গেছেন ১৯০ জন। হারপিক পান ও ঘুমের ওষুধ সেবনেও কয়েকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
জানুয়ারী মাসে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ১৫ জন, ফেব্রুয়ারীতে ১৩ জন, মার্চে ১০জন, এপ্রিলে ৮ জন মে মাসে ১২ জন, জুন মাসে ১৩ জন, জুলাই মাসে ২১ জন, আগষ্ট মাসে ২৯ জন, সেপ্টেমবর মাসে ২৫ জন, অক্টোবর মাসে ২১ জন, নভেম্বর মাসে ১৩ জন ও ডিসেম্বর মাসে ১০ জন। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে জানুয়ারী মাসে ১জন, ফেব্রুয়ারীতে ২ জন, মে ৩ জন এবং জুন মাসে ২ জন, জুলাই মাসে ৫ জন, আগষ্ট মাসে ৬ জন, সেপ্টেমবর মাসে ৭ জন, অক্টোবর মাসে ৭ জন, নভেম্বর মাসে ৪ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৬ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসকের কাছে আত্মহত্যার প্রবনতার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও রাজশাহীসহ সারা দেশে আত্মহত্যার খবর খুব বেশি একটা শোনা যেতনা। কিন্তু বর্তমানে পত্রিকার পাতা খুললেও চোখে পড়ে আত্মহত্যার মত মারাত্মক ঘটনার। যা আমাদের সমাজের সচেতন মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তিনি আত্মহত্যার প্রবনতা প্রসঙ্গে আরো বলেন, স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জের ধরে অভিমানে অনেক নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তারমধ্যে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছা থাকেনা। সংসারে অভাব-অনটন, চাওয়া-পাওয়ার সংমিশ্রন না ঘটলে এবং পরকিয়ার কারণেও অনেক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। কাঙ্খিত কোন কিছু না পেলেই তাদের মধ্যে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছা হয় এবং সেই ইচ্ছা থেকেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যার করার আগেও সেসব নারী ও পুরুষরা মনে করেন কেউ যদি তাদের কাছে এগিয়ে আসেন তাহলে তারা আত্মহত্যা করবে না। কিন্তু অবশেষে যখন কাউকেই সে পাশে পায়না তখন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
আত্মহত্যার মতো ঘটনার জন্য শুধু যিনি আত্মহত্যা করেন তিনিই দায়ী নন এর জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোও দায়ী বলে অভিমত দেন তিনি। সমাজের মানুষদের ব্যপক সচেতনতার মাধ্যমে আত্মহত্যার মত ঘটনা কিছুটা কমতে পারে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
আত্মহত্যার মত ঘটনাগুলোকে কমিয়ে আনতে হলে ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজকেও অনেক ভুমিকা পালন করতে হবে বলে তারা আরো মনে করেন।
হাসপাতালের তথ্য ছাড়াও আরো অনেক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। যে ঘটনাগুলো পত্রিকার পাতায় আসেনা। যা অজানায় রয়ে যায়। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্ট ছাড়া এ থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলেও সচেতন মহল মনে করেন।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে