ঢাকাশনিবার , ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭
   
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীর বেসরকারী ক্লিনিকগুলোর রমরমা টেস্ট বাণিজ্য, অসহায় রোগীরা!

অনলাইন ভার্সন
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭ ২:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থিত বেসরকারী ক্লিনিকগুলোর টেস্ট বাণিজ্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রতিদিন রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা রোগীরা টেস্ট অর্থাৎ পরীক্ষা/নিরীক্ষার জন্য ক্লিনিকগুলোতে হাজার হাজার টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে চিকিৎসককে দেখালেই তারা রোগীদের কয়েকটি কমন টেস্ট দিয়ে দিচ্ছেন। টেস্ট করানো ছাড়া কোন উপায় থাকেনা রোগীদের। আর একটু সুস্থ্যতা লাভের জন্য রোগীরা চিকিৎসকের উপদেশ অনুযায়ী পরীক্ষা/নিরীক্ষা করে থাকেন। টেস্ট করাই যেন রোগীদের জন্য অবশ্যক হয়ে পড়েছে। টেস্ট করা ছাড়া রোগীরা চিকিৎসকদের ওষুধ পত্র লিখে পাননা বা রোগীদের সেই সুযোগও থাকেনা বলেই অভিযোগ রয়েছে রোগীদের পক্ষ থেকে।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
এ ক্লিনিকগুলোতে রাজশাহীর বাইরে থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এসব রোগীরা চিকিৎসক দেখানোর পর তাদের হাতে টেস্টের একটা ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই টেস্ট করানোর পর চিকিৎকরা রোগীদের ওষুধ লিখে দেন। যে রোগ নিয়েই রোগীরা যাক না কেন তাদের টেস্ট ধরিয়ে দেয়া হয়। সেই টেস্ট করানোর পরেই মূলত রোগীদের ওষুধ লিখে দেওয়া হয়। তবে আরেক সূত্র জানায়, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা মূলত রোগীদের পরীক্ষা/নিরীক্ষাকেই কেন্দ্র করে। টেস্ট যত বেশি দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষের লাভও তত বেশি হয়। আর শুধুমাত্র টেস্ট ব্যবসা করার জন্য ডাক্তারদের চেম্বারে বসতে দেওয়া হয়। কোন ডাক্তার কমন কিছু অপ্রয়োজনীয় টেস্ট না লিখলে সেই ডাক্তারকে টেস্ট লেখার জন্য চাপও দেওয়া হয় বলে সূত্রে জানা গেছে।

 

 

এ ছাড়া কোন রোগী যে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার দেখান সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাও বাধ্যতামূলক। যদি না করা হয় তাহলে তার রিপোর্ট দেখা হয় না। জোরপূর্বক রোগীকে টেস্ট করানো হয়।
এ কারণে ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আগেই বেশি টেস্ট দেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে। যার ফলে চিকিৎসকরা রোগীর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টেস্ট দিয়ে থাকেন বলে রোগীদের অভিযোগ। এভাবেই চলে ক্লিনিক ও ডায়ানস্টিক সেন্টার মালিকদের টেস্ট বাণিজ্য।
সূত্র আরো জানায়, সামান্য অসুখ নিয়ে আসলেও তাকে কয়েক হাজার টাকার টেস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। হয়তো দুই/একটি টেস্টের প্রয়োজন পড়ে। কিন্ত রোগীদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টেস্ট দেওয়া হয়। যার কারণে রোগীদের ডাক্তারি ফি ও টেস্ট করাতেই টাকা ফুরিয়ে যায়। পরে তারা আর ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরতে পারেননা। রাজশাহীর বেশির ভাগ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই এমন কর্মকান্ড দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এটা গেল ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাধারণ রোগীর কথা। কিন্ত রোগীকে যদি কোন দালাল নিয়ে যায় তাহলে তার টেস্টের সংখ্যাও বেড়ে যায় দ্বি-গুণ। বাড়তি টাকা নিয়ে দালালকে দেওয়া হয়।

 

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক রোগী অভিযোগ করে জানান, তিনি ডাক্তারকে দেখানোর পরে ডাক্তার তাকে অনেকগুলো টেস্ট লিখে দেন। টেস্ট লিখে দেওয়ার পরে তিনি ৩ হাজার টাকা দিয়ে টেস্ট করেন। কিন্ত পরে চিকিৎসক টেস্টগুলো দেখে তার জন্য মাত্র কয়েকটি ওষুধ লিখে দেন। যে ওষুধ কিনতে মাত্র ৪৯৫ টাকা লাগে। শুধু এই রোগী নয় তার মত অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে। ফলে রোগীরা বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে আসা তা টেস্ট করতেই শেষ হয়ে যায়। পরে আর তাদের ওষুধ কেনা হয়না। সরকারী কোন মনিটরিং না থাকার এমন ঘটনা ঘটছে বলে সমাজের গুণী মানুষরা মন্তব্য করেছেন।

 

এদিকে, গত কয়েকদিন আগে রাজশাহীর বাইরে থেকে শাপলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী অভিযোগ করে জানান, তিনি বাড়ি থেকেই মোবাইল ফোনে সিরিয়াল দিয়েছিলেন। কিন্ত ডাক্তারি টেস্টগুলো বাইরে থেকে করার কারণে তারা রোগীকে দেখবেনা বলে জানিয়ে দেন। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে তার রোগীকে ডাক্তার দেখানো হয়।
এই দৃশ্য শুধু এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নয় প্রায় প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৃশ্য এটা। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, টেস্ট লিখতে ডাক্তারদের জোর করা হয় না। প্রয়োজনীয় টেস্টই ডাক্তাররা দেন।

 

আবার রোগীদের পক্ষ থেকে এমনই অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় ডাক্তার দেখানোর আগেই টেস্ট করতে নির্দেশনা দেয় ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ। পরে টেস্ট দেখে ডাক্তার চিকিৎসা করবেন।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য রাজশাহী মহানগরীতে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দালাল নির্ভর। দালালের রোগী সরবরাহের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে।

 

তাই এসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, মাঝে মধ্যেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সবকিছু দেখা হয়। নির্ধারিত অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খবর২৪ঘণ্টা/এমকে

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।