রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ১৮ লাখ টাকার চেক, অস্ত্র, গুলি, হেরোইন, গাঁজা ও ইয়াবাসহ মেয়রের স্ত্রী এবং তার দুই ভাতিজাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ জেলা পুলিশের এ অভিযানে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভার বর্তমান মেয়র (আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী) মুক্তারের স্ত্রী মোছাম্মদ জেসমিন আক্তার (৪০), মেয়র মুক্তারের দুই ভাতিজা নবাব আলীর ছেলে সোহান (২৫) ও সামিরুলের চেলে শান্ত (২৩)।
এ নিয়ে বুধবার দুপুরে রাজশাহী জেলা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত জানান পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় তার দলবল নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয় বাংলা মোড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করে। মেয়র ও তার দলবলের ভয়ে মজনু বাড়ির ভিতরে চলে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারধর শুরু করে। মজনুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে এবং স্কুল শিক্ষক স্ত্রী মজনুকে রক্ষা করতে এলে মেয়র তাদেরকেও মারধর করে আহত করে।
উল্লেখ্য যে মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষ নিয়ে মেয়রের বিরোধী শিবিরে নির্বাচনে কাজ করেছিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত রাতেই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আড়ানি পৌরসভার পিয়াদাপাড়া গ্রামের মৃত নইম উদ্দিনের ছেলে মেয়র মুক্তার আলী (৪৫), বাঘা উপজেলার চক সিংগা গ্রামের সোহরাব আলীর ওরফে মন্টুর ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অঙ্কুর (৩২) এর নাম উল্লেখসহ আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ এর নেতৃত্বে বাঘা থানার অফিসার
ইনচার্জ নজরুল ইসলামসহ বাঘা থানার একটি দল মেয়র ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলে সেখান থেকে একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি ম্যাগজি, ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউণ্ড তাজা গুলি, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি গুলির খোসা, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশি তৈরি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, ১০ গ্রাম গাঁজা, ৭ পুরিয়া হেরোইন, ২০পিস ইয়াবা ও ১৮ লাখ টাকার স্বাক্ষর করা চেক এবং নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। মেয়র পালিয়ে গেলেও তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোন অস্ত্রেরই লাইসেন্স ছিল না এবং উদ্ধারকৃত টাকার কোনো জবাব তারা দিতে না পারায় জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও টাকা উদ্ধারের পৃথক পৃথক মামলা হবে। মেয়র হলেও কোনো অনুকম্পা তিনি পাবেন না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, মেয়র মাদক, মানি লন্ডারিং এবং অস্ত্রের ব্যবসা করতো কিনা সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম, সহকারী পুলিশ সুপার, (গোদাগাড়ী সার্কেল) আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার, (ডিএসবি ও চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ প্রমুখ।
এস/আর