ওমর ফারুক, রাজশাহী:
রাজশাহী মহানগরীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি ও ছিনতাই হওয়ায় রাজশাহী মহানগরবাসী আতঙ্কের মধ্যে চলাফেরা করছেন। যদিও এর আগে সকাল ও বিকেলে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর মধ্যে একটি কলেজ ছাত্রের কাছে ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে ও অন্যাটি প্রকাশ্যে বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা করা। হঠাৎ আইনশৃঙ্খলার এমন অবনতি হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও বাইরে চলাফেরা করা সাধারণ মানুষ। বেশ কয়েকটি ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে নগরবাসীকে। সম্প্রতি যেসব ঘটনাগুলো ঘটেছে এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নগরীর বর্নালীর মোড় এলাকায়
রাজশাহী সিটি কলেজ ছাত্রের কাছে ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে নৃসংশভাবে খুন করা। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। পরে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ খুনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ও রহস্য উদঘাটন করে। এ ছাড়া দিনে-দুপুরে অটোরিক্সায় রুয়েট ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও রুয়েট শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর তদন্তে আসামীরা গ্রেফতারও হয়েছে। তারপরও অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে নগরবাসীকে। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি এমন ঘটনা ঘটছে। গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যকেই ছুরিকাঘাত করে ছাত্র
ছিনতাইকারীরা। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কারণ চেকপোস্টে পুলিশ ছুরিকাঘাতের শিকার হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটুকু। অপরাধ করার পরে এসব আসামীরা কম সময়ের মধ্যে ধরা পড়ে যাচ্ছে। তারপরও বাড়ছে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগস্ট মাসের শুরুর দিক থেকে রাজশাহী মহানগরীতে একের পর এক অপরাধমূলক কাজ ঘটেই চলেছে। আর ঈদের দু’দিন আগে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ও জনাকীর্ন এলাকায় স্ত্রীর শ্লীলতাহানীর প্রতিবাদ করায় মারধরের শিকার হন এক রুয়েট শিক্ষক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। কয়েকদিন পরে ওই
শিক্ষকের স্ত্রী থানায় ৮ জন তরুণ-তরুণীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতারও করে। বাকি আসামীরা পলাতক রয়েছে। এর মাত্র দুই দিন পরেই রুয়েট ছাত্রী দিনের বেলায় অটোরিক্সায় যৌন হয়রনির শিকার হয়। ওই ঘটনাতেও বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের হয়। মামলার পর পুলিশ ওই অটোরিক্সা চালককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তবে মুল আসামীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তার আগে বর্নালী মোড়ে ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে কলেজ ছাত্র রাব্বিকে হত্যা করা হয়।
এরপর থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিন আগে নগরীর শালবাগান এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে অটোরিক্সার যাত্রীর কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মারধর করে কেড়ে নেয়। মামলার পর
পুলিশ ১ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধারসহ ৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। এরপর গত ১৯ জুলাই তানোর-রাজশাহী রোডের বাগসারায় এক পথচারীর কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। সেই ব্যক্তি পবা থানায় মামলা দায়ের করলে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে ও তিন ছিনতাইকারীকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ আটক করে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ৩০ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে থেকে দুই জন চোর ফেজার মোটরসাইকেল যার আনুমানিক
মূল্য ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যায় চুরি হলেও পুলিশ রাত ১০টার মধ্যে চোরাই মোটরসাইকেলসহ দুই চোরকে আটক করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আরো ৫ ছিনতাইকারীকে আটক করে।
তার মাত্র একদিন আগে ২৯ আগস্ট পুলিশ চেকপোস্টে ব্যাটারি চালিত রিক্সার তিন যাত্রীকে সন্দেহ হলে তল্লাশী করতে চাইলে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য বের হওয়া ছাত্ররা কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যকেই ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
এসব একের পর এক ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে নগরসাবীকে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা চিন্তিত। মহানগরীর টিকাপড়া পাড়া এলাকার রাব্বিল নামের একব্যক্তির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে যেভাবে প্রকাশ্যে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে তাতে বাইরে বের হওয়ারই মুশকিল হয়ে পড়েছে। এখনই এদের দমাতে হবে। নাহলে শান্ত নগরকে এরা অশান্ত করে তুলবে।
কয়েকদিন আগেই এমন অপরাধ হতোনা এই শহরে।
কাদিরগঞ্জ এলাকার তোহরুল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসার কাজে প্রায় সময় বাইরে থাকতে হয়। কিন্ত গত কয়েকদিন ধরে যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তাতে টাকা-পয়সা নিয়ে বাইরে থাকতে ভয় পাচ্ছি। কারণ ছিনতাইকারীদের উদ্দেশ্য সফল না হলে তারা ছুরিকাঘাত করে। এতে প্রাণ যাওয়ারও সংশয় রয়েছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায়না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। পুলিশি টহল বাড়ানোর ব্যাপারে মতামত দেন। শুধু তিনি নগরীর অনেক মানুষই এখন নিরাপত্তা বা পুলিশি টহল জোরদার করার জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেছেন। শান্ত নগরকেই অশান্ত করার আগেই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের দাবি করেন নগরবাসী। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার
গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি। পুলিশি তৎপরতা বাড়ার কারণে চুরি-ছিনতাইকারীরা বেশি ধরা পড়ছে। তালিকাভুক্তদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তিনি বলেন, অপরাধ করে জেলে যাওয়ার পর জামিনে থাকলে তাকে আর আটক করা সম্ভব হয়না। এই সুযোগটাও কাজে লাগিয়ে থাকতে পারে তারা। অপরাধ করেই এরা তালিকাভুক্ত হয়। কোন অপরাধ যাতে না সংগঠিত হতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর/এস