ওমর ফারুক : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে পবিত্র ঈদুল ফিতরেও রাজশাহীর সব মার্কেট বন্ধ থাকলেও গোপনে একদিকে সাটার খুলে কাপড় পট্টির ব্যবসায়ীরা ও কিছু বিক্রেতা ফুটপাতে বেচাকেনা করছেন। আর ঈদের কেনাকাটা করতে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছে গ্রামের মানুষ। কেনাকাটা করতে আসা এসব মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেনা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দোকানদার থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত সবাই যেন উদাসীন এই নির্দেশনা মানতে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে ১৭ ই মার্চ থেকে রাজশাহীসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। একই মাসে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। তারপর থেকেই বাড়ছে সাধারণ ছুটির মেয়াদ। বিভিন্ন জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর নিজ নিজ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মানুষকে সচেতন করতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এখনো সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার লকডাউন শিথিল করে চলতি মে মাসের ১০ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে দোকান মার্কেট খুলে দেয়ার কথা জানান। এর পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মার্কেট ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বন্ধ করার ঘোষণা দেন। শিক্ষা নগরী রাজশাহীতেও করোনা সংক্রমণ ছড়ানো রোধে গত মে যৌথসভা করে মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানানো হয় রাসিকের পক্ষ থেকে। তারপরও নগরে দোকানপাট একদিকের সাটার খুলে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
পিছিয়ে নেই রাজশাহী মহানগরের প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারেএ বিভিন্ন দোকান মালিক। অন্যতম প্রধান মার্কেট আরডি বন্ধ থাকলেও তা খুলে দেয়ার জন্য মালিক ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ করে। সিদ্ধান্ত মেনে বড় বড় মার্কেট ও শপিং মল না খুললেও ব্র্যান্ডের শোরুম কাপড় পট্টির কিছু দোকান ও ফুটপাতে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের বেচাকেনা অব্যাহত রেখেছেন। করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরেও মানুষ সচেতন না হয়ে নিজের পরিবারের নারী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে আসছেন সাহেব বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে।
কেনাকাটা করতে আসা মানুষজন মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। দোকানের মধ্যে ঢুকে নিজের পছন্দের পোশাক কেনাকাটা করছেন। আর এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও করো না সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি। যদিও ফুটপাতে বসা দোকানদারদের মাঝেমধ্যেই তুলে দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরও তারা নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততোই রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার এলাকায় মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি গ্রাম থেকেও আসছেন মানুষ কেনাকাটা করতে। আর সাহেব বাজার কাপড় পট্টির দোকানিরা একদিকে শাটার খুলে ক্রেতাদের ডেকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে ব্যবসা করছেন। এদের মধ্যে কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।
শুধু এসব দোকানেই নয় রাস্তার পাশে বিভিন্ন ফুটপাত ও অন্যান্য জায়গার মার্কেটের দোকানেও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা বা চলাচল করছেন না কেউ। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে রাস্তাঘাটে রিকশা-অটোরিকশা অন্যান্য যানবাহন চলাচল। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব যানবাহন অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর সচেতন মানুষ নগরবাসীকে করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এসব সচেতন মানুষ বলছেন এখনই যদি অবাধ চলাচল, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানুষ না মানে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। রাজশাহীকে করোনা মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক গুরুত্ব মেনে চলার বিকল্প নেই।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে সমস্যা নাই। স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোকান খুললে অবশ্যই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর যারা কেনাকাটা করতে আসছেন তাদেরকেউ সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করতে হবে।
এমকে