নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুরে অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. ডিএ রশীদের বিরুদ্ধে শিশু রোগীর খালাকে রোগী বানিয়ে যৌণ হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন, হরমোন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। ঘটনার পর রোগীর স্বজনরা ডাক্তারকে তার চেম্বারে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় মাস্তান ও বখাটেরা টাকা নিয়ে বাদীকে ছাড়াই মীমাংসা করার চেষ্টা করে। রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই শিশু রোগীর বয়স ৮ বছর ও তার খালার বয়স (২১)। শিশুর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। যৌণ হয়রাণির শিকার যুবতী রাজশাহী মহানগরীর একটি সরকারী কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করে।
জনৈক কলে ছাত্রী অভিযোগ করে জানান, রোববার বিকেলে তার বোনের মেয়ের হরমোনজনিত সমস্যা নিয়ে তিনি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. ডিএ রশীদের সিরিয়াল দেন। এরপর রাতে সিরিয়াল পেলে তিনি ও তার বোনের মেয়ে ও দুলাভাই ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করেন। চেম্বারে প্রবেশের পর ডাক্তার দরজা লাগিয়ে দিয়ে সবাইকে বের করে দেয়। দরজা লাগানোর পর ডাক্তার তার বোনের মেয়ের (রোগী) শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দেখেন। তারপর ডাক্তার তাকেও রোগী বানিয়ে নানান ধরণের আপত্তিকর কথা বলে ও শরীরে হাত দেন। এরপর জোরপূর্বক তাকে বেডে শোয়ানোর চেষ্টা করে। ডাক্তারের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে বিষয়টি তার স্বজনদের জানান।
এ ছাড়া ডাক্তার তাদের বলে যে, এসব গোপন চিকিৎসা। আগামীকাল আবার আসতে হবে। তবে সাথে কাউকে নিয়ে আসা যাবে না। দু’জন আসলেই হবে। ভাল চিকিৎসা দেওয়া হবে। কথাগুলো বলতে বলতেই রোগীর খালা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, আমরা চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তারের কাছে যৌণ হয়রানির শিকার হয়েছি। এ ঘটনার বিচার চাই। যাতে আর কোন রোগীকে ডাক্তারের কাছে এমন হয়রানি না হতে হয়।
শিশু রোগীও অভিযোগ করে বলে, ডাক্তার আমার সমস্যা আছে বলে খালাকে খারাপ খারাপ কথা বলে ও শরীরে হাত দিয়েছিল। এরপর জোর করে বেডে শুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। যৌণ হয়রাণির শিকার মেয়েটি চিৎকার করে বাইরে বের হয়ে স্বজনদের বিষয়টি তারা ডাক্তারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দোতলায় গিয়ে দেখা যায় শিশু রোগী ও তার খালা ব্রেঞ্চে বসে কাঁদছে। আর ডাক্তার ডিএ রশীদের সাথে কথা বলতে তার চেম্বারে গেলে ডাক্তারকে ঘিরে রাখা স্থানীয় মাস্তান ও বখাটেরা বলে বিষয়টি তারা মীমাংসা করে দিয়েছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বাধা দিয়ে রুম থেকে চলে যেতে বলে।
অথচ রোগীর লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তারপরও মাস্তানরা জোর করে মীমাংসার চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি।
এর কিছুক্ষণ পরেই বখাটেরা অভিযোগকারী ছাড়াই ডাক্তারকে নিয়ে অন্য একটি কক্ষে মীমাংসায় বসে। যার পুরোটাই ছিল নাটকিয়।
ঘটনার পরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার শামিমকে পাওয়া যায়নি। তার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেন নি। মার্কেটিং অফিসার রেজাউল করিম বলেন, এখন কেউ নেই আমি কিছু বলতে পারবো না।
ডাক্তার ডিএ রশীদ তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আমির জাফর বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে