নিজস্ব প্রতিবেদক : শুধু আইপিএল বা বিপিএল নয় এখন রাজশাহী মহানগরীর পাড়া-মহল্লায় লুডু খেলার নামে চলছে জুয়ার রমরমা আসর। এতে করে কেউ কেউ আর্থিকভাবে লাভবনা হলেও বেশির ভাগই ক্ষতির মধ্যে পড়ছে। নগরের বিভিন্ন দোকান ও পাড়া-মহল্লায় সম্প্রতি সময়ে এ লুডু খেলার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। অনলাইন লুডু খেলায় অপরপ্রান্তের একাধিক ব্যক্তি যুক্ত থেকে জুয়া খেলছে। আর হেরে যাওয়াদের কাছ থেকে নির্ধারিত টাকা বিজয়ী হওয়া ব্যক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে এটি পাড়া-মহল্লার উঠতি বয়সের ছেলে ও যুবকদের বেশি খেলতে দেখা যাচ্ছে। লুডু খেলার নামে নগরজুড়ে একশ্রেণীর সিন্ডিকেট এটি পরিচালনা করছে বলে সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) শুরু হলেই শিক্ষানগরী রাজশাহী জুড়ে রমরমা বাজির আসর জমে উঠতো। মোবাইলের মাধ্যমে ওই বাজি চলতো। এছাড়াও নির্ধারিত স্থানে জুয়া খেলোয়াড়রা একসাথে বসে খেলার অবস্থা বুঝে এই বাজি ধরতো। এটি বেশ পুরাতন খবর। কিন্ত এখন আরা আইপিএল বা বিপিএল’র অপেক্ষা নয়। বছরের প্রত্যেকদিনই লুডু খেলার নামে জুয়ার রমরমা আসর চলছে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় এই লুডু খেলায় অপর প্রান্ত থেকে একাধিক ব্যক্তি বা জুয়াড়– যুক্ত থাকে। আর এই লুডু জুয়া নিয়ন্ত্রণ করছে পাড়া-মহল্লার
উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকরা। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জুয়া খেলা সম্ভব হওয়ায় এটি বেশ নিরাপদ ও জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। লুডু খেলার নাম করে তারা ভাগ ভাগ হয়ে বসে এই জুয়া চালিয়ে যাচ্ছে। অফলাইন লুডু খেলা প্রক্রিয়ায় ৪ জন খেলার সুযোগ থাকলেও অনলাইন লুডু খেলায় এর বড় পরিসর ও একাধিক ব্যক্তির যুক্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। যারা খেলে তারা বিশ্বস্ত একজনের কাছে টাকা জমা দেয় ও খেলা শেষে বিজয়ী ব্যক্তির কাছে টাকা হস্তান্তর করে। এক্ষেত্রে যারা হেরে যায় তারা নেশার মোহে পড়ে আবার খেলা শুরু করে। এক সময় টাকা শেষ হয়ে গেলে বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকের কাছে পুনরায় টাকার জন্য বায়না ধরে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তারা ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। লুডু জুয়ার কারণে একদিকে যেমন বেশির ভাগই খেলোয়াড় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে
তেমনি পারিবারিক অশান্তিও সৃষ্টি হচ্ছে। এমনও তথ্য জানা গেছে, লুডু খেলায় হেরে যাওয়ার পর মা-বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেই তরুণ বা যুবক চুরি করে ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে গিয়ে বাইরে বিক্রি করে লুডু জুয়া খেলেছে। নগরের সাহেব বাজার, টিকাপাড়া, মালোপাড়া, ভাটাপাড়া, লক্ষèীপুর, উপশহর, ডিঙ্গাডোবা, কোর্ট স্টেশন, শিরোইল, গোরহাঙ্গা, নওদপাড়া, ভদ্রাসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জুয়া খেলা চলছে। বিশেষ করে সারাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর লকডাউনের মধ্যে এই লুডু জুয়া খেলার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়েছে। এই জুয়া খেলা নিরাপদ হওয়ায় বখাটে ও উঠতি বয়সের তরুণরা এই দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, এখনই এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভবিষ্যতে তরুণরা এই জুয়ার প্রতি আরো আকর্ষিত হয়ে
পড়বে। কারণ যারা এই জুয়ায় ছেলেদের আকৃষ্ট করছে তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবনকারী। আর টাকার লোভে পড়লে এটি নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। পড়াশোনার প্রতিও টান কমে যাবে। অফলাইন ও অনলাইন জুয়ার যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে এ ধরণের কয়েকজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে বাকিরা ভয়ে এটি ছেড়ে দিতে পারে। এ জন্য তারা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শামিউল নামের একব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। আগে তেমন বাইরে না গেলেও সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাড়ি থেকে বের হয়ে মহল্লার অন্য ছেলেদের সাথে সারাদিন বসে বসে লুডু খেলছে। পরে খবর নিয়ে দেখা গেল তারা টাকার মাধ্যমে এই লুডু খেলে। নিষেধ করলেও গোপনে গিয়ে খেলে।
উপশহর এলাকার নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক নারী বলেন, আগে আইপিএল ও বিপিএল’র সময় আমার ছেলে বাজি ধরে জুয়া খেলতো। কিন্ত এখন লুডু নিয়ে তার মতো বয়সের ছেলেদের সাথে পড়ে থাকে আর প্রতিদিন টাকা চায়। দিতে ব্যর্থ হলে চড়াও হয়ে যায়। তাই টেকসইমূলক একটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে এটি কমিয়ে আনা সম্ভব। এখন থেকে নজরদারি বাড়ানো হবে। যারা এটি পরিচালনা করছে তাদের নজরদারির মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। এটি কমিয়ে আনতে অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। বিট পুলিশিং সভায় এটি নিয়ে আলোচনা ও সচেতনতার জন্য বলা হবে।
এমকে