নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর ঘোষপাড়ায় অবস্থিত মা-ফাতেমা ক্লিনিকে সিজারিয়ানের পর আলাফি (২৭) নামের এক গৃহবধূর পেটে গজ রেখেই সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে গাইনী ডা. নাজনীন সুলতানা রিতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোববার বিকেলে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর স্বামী আলী আযম।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আলী আযমের স্ত্রী আলাফি গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৩ তারিখে রাজশাহী মহানগরীর ঘোষপাড়ায় অবস্থিত মা ফাতেমা ক্লিনিকের গাইনী ডা. সুলতানা নাজনীন রিতার কাছে অন্তসত্তা অবস্থায় চিকিৎসা করাতে আসেন। তাকে দেখে চিকিৎসক নাজনীন সুলতানা ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিজারিয়ান করেন। সিজারিয়ানের ৫দিন পর তাকে ছুটি দেওয়া হয়। বাড়ি যাওয়ার পর ওই গৃহবধূর পেটে ব্যথা হয়। ব্যথার কারণে ২৯দিন পর আবার তাকে মা ফাতেমা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তি হয়ে ৪দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে ছুটি দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় আবার তার পেটে ব্যথা হয়। এবার পেটে ব্যথা হলে তারা ডাক্তারের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। নিরুপায় হয়ে তারা নগরীর লক্ষীপুরে অবস্থিত রয়েল হাসপাতালের গাইনী ডা. সাবা সুলতানার কাছে দেখান। তিনি দেখে আল্ট্রাসনো করার পরামর্শ দেন।
আল্ট্রাসনো করে পেটে কোন কিছু ধরা না পড়ায় তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার ইসলামী হাসপাতালে পুনরায় আল্ট্রাসনো করান। ইসলামী হাসপাতালে করা আল্ট্রাসনোর রিপোর্টে তার পেটে গজ ধরা পড়ে। এরপর ডা. সাবা তাকে মাদারল্যান্ডে রেফার্ড করেন। সেখানে ভর্তির পর সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাকিম ও গাইনী চিকিৎসক সাবা তার অস্ত্রপাচার করেন। অস্ত্রপাচার করে ডাক্তার তার পেট থেকে পুজ ও গজ বের করেন।
ওই গৃহবধূর পেটের নাড়ি পচে যাওয়ায় পেটের একপাশ দিয়ে মলদ্বারের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে ওই গৃহবধূ মাদারল্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তার স্বামী অভিযোগ করে বলেন, অপারেশনের আগে থেকে ডাক্তার রিতার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার স্ত্রীর অবস্থা খারাপ। তার নাড়ি পচে যাওয়ায় ডাক্তার অন্য পাশ দিয়ে মলদ্বারের ব্যবস্থা করেছেন। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত করতে পারে না। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। যাতে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠ বিচার পাই।
এ বিষয়ে মা ফাতেমা ক্লিনিকের গাইনী চিকিৎসক ডা. সুলতানা নাজনীন রিতার সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রয়েল হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডা. সাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই রোগী এর আগে কাকে দেখিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। আমার কাছে তারা পেটে পুজ নিয়ে এসেছিল। অল্ট্রাসনো করার পর বিষয়টি জানতে পেরে আমি তাকে মাদারল্যান্ডের সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. হাকিমের কাছে রেফার্ড করি।
গৃহবধূ আলাফির অপারেশনকারী সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, গত শনিবার রাতে গৃহবধু আলাফির অপারেশন করে পেট থেকে অনেক পুজ বের করা হয়েছে। তার পেটের নাড়ি ফুটো হয়ে যাওয়ায় মল বের হচ্ছিল। তাই পেটের একপাশ ফুটো করে মলদ্বারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পেট থেকে মব বা গজ পাওয়া যায়নি। রোগীর লোকজন যে গজ দেখিয়েছে তা কিসের সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত গজ তারা তুলে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, থানায় এ বিষয়ে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। আসলে অপারেশন সেখানে হয়েছিল কিনা বা কি কাগজপত্র আছে তা দেখে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমআর