খবর২৪ঘণ্টা.ডেস্ক: মাদক দমনের নামে ফিলিপাইনি কায়দায় বাংলাদেশে যে অভিযান শুরু হয়েছে তা আতংক ছড়াচ্ছে। বিগত একসপ্তাহের অভিযানে কথিত বন্দুক যুদ্ধে যে ৫০ জন লোক প্রাণ হারিয়েছে তার পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের করা এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
‘বাংলাদেশ’স ফিলিপাইন স্টাইল ড্রাগস ওয়ার ক্রিয়েটিং এটমোস্পেয়ার অফ টেরর শিরনোমারে ঐ প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়- মাদক বিরোধী অভিযানে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে মাদক পাচারকারি সন্দেহে ৫০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা, তারা বলছেন- ফিলিপাইনি কায়দায় এমন অভিযানে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড বাড়তেই থাকবে।
মাদক অভিযানে যারা নিহত হচ্ছে তার মধ্য কিছু সংখ্যক নিহত হবার ঘটনার স্বচ্ছতা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নিহতের পরিবারের এক স্বজন গার্ডিয়ানকে জানান, যাকে মারা হয়েছে তিনি কখন মাদক ছুঁয়েও দেখেননি। এছাড়া তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজন কর্মী ছিলেন শুধু।
এই পরিবার ছাড়াও হত্যাকান্ডের শিকার অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, যাদেরকেই পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তার ঘন্টা কয়েক পর রাতে তাদের বন্দুক যুদ্ধে মারা যেতে দেখা যায়। আর বলা হয়- সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের সময় মারা গেছে।
নেশাজাতীয় মাদক ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে বাংলাদেশে গত সপ্তাহে এই মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অভিযানে জঙ্গিবাদকে যেভাবে নির্মূল করা হয়েছে এ অভিযানে একইভাবে মাদক বিস্তার দমন করা হবে।
মাদকের অভিযানে প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ১০ দিনে নিহত হয়েছে ৫২ জন, যার মধ্যে বৃহস্পতিবারের অভিযানে মারা গেছে ৯ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে আমজাদ হোসেন নামের একজন মারা যায়। এএসপি আশরাফুল আলম এ প্রসঙ্গে গার্ডিয়ানকে জানান, আমজাদের বিরুদ্ধে খুন, সহিংসতা আর মাদকসহ ১৪ টি মামলা আছে। আমরা যখন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার বাড়িতে অভিযান চালাই তখন সে ও তার সঙ্গিরা আমাদের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং আমজাদ নিহত হয়।
কিন্তু আমজাদের ভাই মাহিদ আহমেদ আনসারি গার্ডিয়ানের কাছে জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মাদকের সঙ্গে আমজাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ ইচ্ছে করেই বন্দুকযুদ্ধে আগে বাড়িতে অভিযান চালায়।
মাহিদ বলেন, পুলিশ অভিযানের সময় আমার ভাইকে নির্দয়ভাবে প্রহার করে। তিনি বলেন, ভাই মাদক বিক্রি করেন-এমনটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সে বিএনপি ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সে জনপ্রিয় কর্মী এ জন্যই হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে মামলাগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে একটা প্রপাগান্ডা আর হয়রানির অংশ।
মাদকবিরোধী অধিকাংশ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে র্যাব। যার বিরুদ্ধে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের দায়ে বার বার অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকারসংগঠনগুলো।
সোমবার চট্টগ্রামে শুকুর আলী নামের একজনের হত্যাকান্ডে র্যাব কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। র্যাবের দাবি তিনি ছিলেন আলোচিত ইয়াবা আর গাঁজা ব্যবসায়ী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা আছে ১০ টি।
র্যাব বলছে- চট্টগ্রামে একটি গোপন মাদক আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় বন্দুকযুদ্ধ বেধে যায়, তারপর শুকুর আলীকে মৃত পড়ে থাকতে দেখা যায়।
কিন্তু স্বজনরা গার্ডিয়ানকে জানালেন ভিন্ন কথা। শুকুর আলীর জামাতা মোহাম্মদ সোহেল গার্ডিয়ানকে বলেন- সাদাপোশাকধারী কিছু লোক এসে সোমবার ঠিক মাঝরাতে বাড়ি থেকে শুকুর আলীকে ধরে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনি। আমি বের হয়ে দেখি বাড়ি থেকে কিছু দূরে মাটিতে পড়ে আছে শ্বশুরের লাশ।
তিনি বলেন, আমার শ্বশুর গোপন আস্তানায় ছিলেন এ অভিযোগ সত্য নয়।
মানবাধিকার কর্মী পিনাকি ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশের বন্দুক যুদ্ধের যে উন্মত্ততা শুরু হয়েছে তা সারা দেশে আতংক তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, এটাতো বড় ধরনের মানবাধিকার লংঘন আর বিচারবর্হিভূত হত্যা ছাড়া কিছুই না।
প্রতিবেদেনে বলা হয়, সব ধরনের হত্যাকান্ড তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মিনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন-একজন মন্ত্রী মাদকাসক্তদের গুলি করার কথা বললেন আর প্রধানমন্ত্রী এ অভিযানকে জঙ্গি নির্মূলের সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন- তাতে করে আশংকা তৈরি হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কোনো ধরনের স্বচ্ছ জবাবদিহিতা আর দূরদর্শিতা না দেখিয়েই এসব অভিযান চালিয়ে যাবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জন