যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামী সহকারী পুলিশ সুপারসহ (এএসপি) ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক গৃহবধূ । নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর নাম সায়মা সুলতানা সিমি (৩১)।
এঘটনায়, গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ৫০ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই ভুক্তভোগী গৃহবধূ।
অভিযুক্ত স্বামী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হক বর্তমানে টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার এ কর্মরত রয়েছেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, নওগাঁর জেলার ধামইরহাট উপজেলার চকযদু গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের মেয়ে সায়মা সুলতানা সিমি (৩১) এর সাথে চাপাইনবয়াবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তেররশিরার গ্রামের জারজিস মধুর ছেলে বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হকের সঙ্গে (৩৪) বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বিসিএস অফিসার বলে স্বামী রুবেল হক ও তার পরিবার ২০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। পরে গৃহবধূ সিমির বিধবা মা ও বোন অনেক কষ্টে দশ লক্ষ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণ ও প্রয়োজনীয় আববাবপত্র প্রদান করে।
বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামী রুবেল হক ও তার পরিবারের লোকজন ঢাকায় ফ্ল্যাট বাড়ি ক্রয় করবে বলে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সিমিকে মানসিক ও শাররীক নির্যাতন শুরু করেন।
এছাড়াও স্বামী রুবেল হক প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় থাকে প্রতিবাদ করলে সিমির উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
মদ্যপ স্বামীর নির্যাতনের এক পর্যায়ে গৃহবধু সিমি বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করেন।
এবং এএসপি রুবেলকে পরিবর্তনের জন্য সুযোগ দেন। পরে তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে পুলিশ সুপার পরবর্তীতে ঢাকা ডিআইজির নির্দেশে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে বদলির নির্দেশ দেন।
বদলির পরে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কোয়ার্টারে বসবাস করতে থাকেন গৃহবধূ সিমি ও স্বামী এএসপি রুবেল হক, শশুর, শাশুড়ী ও ননদ নাসরিন খাতুন (২২)।
মামলার এজাহার সুত্রে আরো জানাযায়,
যৌতুকের দাবিতে রুবেলসহ অন্য আসামিরা মাঝে মধ্যে গৃহবধু সিমিকে বেধড়ক মারপিট করেন।
এরই ধারাবাহিকতা স্বামী রুবেল হক মদ্যপবস্থায় আবারও গৃহবধু সিমিকে মারপিট করে এবং বাবার বাড়ি থেকে ৫০ লাখ যৌতুক আনতে বলে।
গৃহবধু সিমি বলেন এত টাকা আমার বিধবা মা কোথায় পাবে। কথাকাটির একপর্যায়ে স্বামী এজাহারভুক্ত আসামিরা পেটে, পিঠে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। পরে শ্বাস রোধ হত্যার চেষ্টা চালান । আহত করে গৃহবধু সিমিকে রুমের মধ্যে আটকে রাখে। পরে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় মামলার সাক্ষী সালমা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে নিরুপায় হয়ে গৃহবধু সিমি গত ১ সেপ্টেম্বর মির্জাপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহন করেননি।পরে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) গৃহবধূ সায়মা সুলতানা সিমি টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- আদালতে তার স্বামী এএসপি রুবেল হক (৩৪), শশুর জারজিস আলী মধু (৫৪), শাশুড়ী, নাসিমা বেগম (৫০) ও ননদ নাসরিন খাতুন (২২) কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এব্যপারে ভুক্তভোগী গৃহবধূ সায়মা সুলতানা সিমি খবর২৪ঘন্টা’কে বলেন, যৌতুকের জন্য স্বামী ও তার পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রশাসনের দ্বারেদ্বারে ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। এমনকি জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দিয়েও সাহায্যের জন্য আকুতি মিনতি করেছি এগিয়ে আসেনি। আমি ন্যায় বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে দাবি জানিয়েছি।
বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ গ্রহন করেছে এবং সুষ্ঠ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনাদের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হক খবর২৪ঘন্টা’কে মুঠোফোনে বলেন, এবিষয়ে আমি এখন কিছুই বলতে চাই না। পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।
বিএ/