খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বসে যারা পাকি প্রেমে যারা হাবুডুবু খেয়েছে; তাদেরকে উপযুক্ত জবাব বাংলার মানুষকে দিতে হবে। তাদের পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। বাঙালি যদি এটা না পারে, তাহলে নিজেদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা যখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, তখনও যারা পাকি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, তারা ডুবেই যাক, সেটা আমরা চাই।
রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, তা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উভয়কেই ‘পাকিস্তান প্রেমী’।
তিনি বলেন, “৭৫’র পর পুরো ইতিহাসই বদলে গিয়েছিল। এমনকি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী; এটাও বলা যাবে না। পাকিস্তান যে হানাদার ছিল; সেটাও ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য শুধু হানাদার বাহিনী বলা হত। পাকি প্রেম এমন পর্যায়ে ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর যারাই ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“তারা তো এদেশের অগ্রযাত্রা চায়নি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এজেন্ডা অন্যভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল। এদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হলে পাকিস্তান খুশি হবে। আর,পাকিস্তানকে খুশি করাই ছিল তাদের কাজ।
এদের মধ্যে জিয়া, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বর্তমানে নিজের বিশেষ দূত সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের নামও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সকলের একই এজেন্ডা ছিল।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে চ্যালেঞ্জ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন পাকিস্তানিরা যে জাহাজে করে অস্ত্র আনছিল, সেই সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। বাঙালির প্রতিরোধের মুখে সে তা পারে নাই। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কেউ দেখাতে পারবেন কি না- জিয়া সেক্টর বা সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে কোনো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর। বাঙালির ইতিহাসে বিভীষিকাময় সেই রাতটি স্মরণে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে নেয় সংসদ।
এই দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মহল দাবি তুললেও জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের গণহত্যা দিবস হিসাবে একটা দিন আছে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে যে দিনে গণহত্যা শুরু হয়; সেই সেই দেশ সেই সেই দিনকে গণহত্যা দিবস হিসাবে পালন করে থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সঙ্গে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং তাদের যারা মদদ দিয়েছিল, তারা সবাই সমভাবে দোষী। তাদের বিচার যেন এই মাটিতে চলতেই থাকে, তাদের কোনো ক্ষমা নাই। আর মদদদানকারীরা ঘৃণার পাত্র।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের বন্দি অবস্থার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এই যে তারা গণহত্যা চালিয়েছিল; আমরা নিজেরাও তো সাক্ষী। অল্প সময়ের মধ্যে এত মানুষ হত্যা; এরকম গণহত্যা আর কোনো দেশে ঘটে নাই। যেটা এই মাটিতে ঘটেছিল।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ