গত শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে চলচ্চিত্রের মুভিলর্ডখ্যাত ডিপজলের বড় ছেলে সৌমিকের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ওমর সানী ও জায়েদ খানের মধ্যে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ওমর সানী সবার সামনে হঠাৎ করেই জায়েদ খানকে চড় মারে। জায়েদ নাকি গত চার মাস ধরে মৌসুমীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। সেই জেরে জায়েদ খানকে চড় মারেন ওমর সানী। জায়েদও চুপ ছিলেন না, কোমর থেকে পিস্তল বের করে বলেন, ‘একেবারে গুলি করে দেব।’
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এদিকে রোববার (১২ জুন) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওমর সানী।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘ ৩২ বছর যাবত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, সমিতির সদস্য জায়েদ খান গত চার মাস ধরে আমার স্ত্রী চিত্রনায়িকা আরিফা পারভীন মৌসুমীকে নানা হয়রানি ও বিরক্ত করে আসছে। আমার সুখের সংসার ভাঙার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। এই ব্যাপারে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার প্রমাণ আমার এবং আমার ছেলের কাছেও আছে। তাছাড়া মুরুব্বি হিসেবে আমি ডিপজল ভাইয়ের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু উক্ত বিষয়ের কোনো সমাধান হয়নি।
অভিযোগে ওমর সানী আরও উল্লেখ করেছেন, ডিপজল ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে জায়েদ খানের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে সংযত হওয়ার জন্য আমি তাকে অনুরোধ করি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে হঠাৎ পিস্তল বের করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি মনে করি, এমন একজন পিস্তলধারী সন্ত্রাসী যেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য পদে থাকতে না পারে, সে জন্য উল্লেখিত বিষয়ে বিশেষভাবে বিবেচনা পূর্বক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
তবে এবার মুখ খুললেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। একটি গণমাধ্যমের ভয়েস দিয়ে তিনি বেশ কিছু কথা বলেছেন। সেই ভয়েস পাঠকের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো,
‘আমি মনে করি আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটা খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে ও আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর ওর মধ্যে গুণ ছাড়া এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কিছুই আমি দেখিনি। তারপর বলব ও অনেক ভালো ছেলে। সে কখনোই আমাকে অসম্মান করেনি।’
মৌসুমী বলেন, ‘কেন এই প্রশ্নটা বারবার আসছে, সে আমাকে বিরক্ত করছে- উত্ত্যক্ত করছে, এই জিনিসটা আমার আসলে… জানি না এটা কেন হচ্ছে। এটা যদিও একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। সে সমস্যা আমাদের পারিবারিকভাবেই সমাধান করা দরকার ছিল।’
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এখানে জায়েদের খুব একটা দোষ আমি পাইনি। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাকে ছোট করার মধ্যে আমাদের… যাকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করে আসছি সেই ওমর সানী ভাই কেন এত আনন্দ পাচ্ছেন- সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমার কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই আমার সঙ্গে সমাধান করবে, সেটিই আমি আশা করি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মৌসুমী আরও বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক ভাইরা আসলে একটা নিউজ পেলে, কথা না বলেই প্রকাশ করেন। এটা আসলে ঠিক না। এটা আসলে আলোচনা করা উচিত। যেহেতু আমার প্রসঙ্গ আসছে, তাই বিষয়টি আমার সঙ্গে আলোচনা করে নিতেন, তাহলে হয়তো প্রসঙ্গটা লিখতেনই না। তিনি (সানী) আসলে এক তরফা বলেছেন, কিন্তু আমি বলেছি কি-না, আমি অভিযোগ করেছি কি-না; জানাটা খুব বেশি জরুরি ছিল।’
প্রসঙ্গত, এই অভিযোগের ভিত্তিতে মুখ খুললেছেন জায়েদ খান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনাটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। এ বিষয়ে আপনারা চাইলে মৌসুমী আপার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। নিশ্চয়ই তিনিও মিথ্যা বলবেন না। আমি আবারও বলছি, আমি কোনোদিন তাকে হেয়প্রতিপন্ন করিনি। এ সব ভুয়া কথা। এখন সানী ভাই একটার পর একটা মিথ্যা গল্প বলছেন। কেন বলছেন তাও বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই তো ১৫–২০ দিন আগেও একসঙ্গে ডিপজল ভাইসহ অন্যরা মিলে মিটিং করেছি। সেখানে তো মৌসুমী আপাও এসেছেন। আমাদের অনেক কথাও হয়েছে। যদিও সম্পর্ক খারাপই তাহলে মিটিংয়ে নিশ্চয়ই একসঙ্গে থাকার কথা নয়। তাছাড়া শুটিং নিয়ে প্রায় সময়ই আমাদের কথা হয়েছে। শুধু শুটিং না, বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা হয়। তাই বলে এ নয় যে যাচ্ছে তাই বলে দিলেন সানি ভাই। এতে তো মৌসুমী আপারও বদনাম হচ্ছে। আমি বিষয়টা বুঝতেই পারছি না সানি ভাই কেন হঠাৎ এমন নাটক শুরু করলেন। এতে তো আমিসহ সব শিল্পীরই দুর্নাম হচ্ছে।
বিএ/