ভোলাহাটকে আমের রাজধানী বলা হয়। এখানকার মানুষের একমাত্র অর্থকরী ফসল আম। গত বছর থেকে করোনার থাবায় নামকাস্তে আম বিক্রয় করতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে আমব্যবসায়ী ও আমবাগান মালিক। আমের বাজার হতাশাজনক হওয়ায় অনেক আম বাগান মালিক আম পেড়ে গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছেন।
এদিকে ১ জুলাই থেকে সরকার করোনা প্রতিরোধে কঠোর শাটডাউন ঘোষণায় আম নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন আম সংশ্লিষ্টরা। পঁচনশীল ফল আম দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে না পারলে আম ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। এদিকে ধারাবাহিক লোকডাউনে অনেক আম বাগান মালিক আমের বাগান বিক্রয় করতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছেন।
ভোলাহাটের একমাত্র আম ফাউন্ডেশন হচ্ছে আম বিক্রয়ের বড় বাজার। এ আম বাজারের আড়ৎদার আম ব্যবসায়ী মোঃ আনসার আলী বলেন, সরকার করোনার জন্য কঠোর শাটডাউন ঘোষণা করেছেন ১ জুলাই থেকে। কাঁচা মাল আম সরবরাহ কাজে নিয়োজিত পরিবহণ শাটডাউনের আওতার বাইরে রাখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, সরকার আম সরবরাহকারী সকল পরিবহন শাটডাউন আওতামুক্ত না রাখলে উপজেলার অর্থনীতিতে চরম ধস নামবে বলে জানান তিনি।
অপর আড়ৎদার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমার আড়ৎ থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৭ টন আম সরবরাহ করে থাকি। সরকার আম সরবরাহকারী পরিবহন বন্ধ করে দিলে ভোলাহাট উপজেলার সব আম পঁচে যাবে। এতে মারাত্মক ভাবে আর্থীক ক্ষতির মুখে পড়বে ভোলাহাটবাসিকে। তিনি সরকারের কাছে আম পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করতে অনুরোধ করেন।
ভোলাহাট আম বাজার আম ফাউন্ডেশনের কুলি মোঃ আনারুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারে মোট ৫জন সদস্য। আমের ট্রাকে সারাদিন আমের ক্যারেটসহ অন্যান্য কাজ করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে সংসার চলে। ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কাজ হারাবো। আমাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। সংসারের সদস্যরা না খেয়ে পথে বসে যাবে।
আড়তে আমের ক্যারেট সাজানো মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, সারা দেশে আম পাঠানোর জন্য আমি সারা দিন ক্যারেটে আম গুছিয়ে যে অর্থ পায় তা দিয়ে সংসার চলে। আমের ট্রাক বন্ধ হয়ে গেলে বাড়ীতে বসে থাকতে হবে। এতে সংসারে অভাব দেখা দিবে।
আম বাগান মালিক মোঃ সেলিম রেজা বিশ^াস বলেন, আমার আম বাগান বিক্রি করেছিলাম। আম ব্যবসায়ীরা ৫ হাজার টাকা অগ্রীম দিয়েছিলেন। বাজারে দাম না থাকায় আমাকে তাঁরা আর টাকা দিতে আসেনি তাঁদের দেয়া টাকাও ফেরৎ নিতেও আসেননি। এখনও আমি ঐ আম বাগানটি বিক্রয় করতে পারিনি। বাগানের আম পেকে পেকে পড়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরও শাটডাউনে সরকার আম পরিবনে বাধা দিলে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। তিনি আম পরিবহনে শাটডাউনের আওতামুক্ত রাখবেন এমন দাবী করেন।
আম বাগান মালিম উপজেলার ময়ামারী গ্রামের মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, আমের অবস্থা খুব খারাপ। আমের গাছ কেটে অন্য ফসল উৎপাদন করবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে আম বাজার ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মধ্যে ক্যারেট বস্তা বিক্রেতা মোঃ রুবেল আলী জানান, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। আমের সময় ক্যারেট বস্তা বিক্রি করে অল্প আয় করে সংসার চালাই। ট্রাক চলাচল না করলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভোলাহাট সরকারী মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোঃ মোসারফ্ হোসেন বলেন, ভোলাহাটের একমাত্র অর্থকারী ফসল আম। আমের উপর নির্ভশীল পরক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে উপজেলার প্রায় ৭০শতাংশ মানুষ। আম পরিবহন করতে না পারলে পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে ভোলাহাটবাসি।
ভোলাহাট উপজেলার একমাত্র আম বাজার আম ফাউন্ডেশন ভোলাহাট এর সাধারন সম্পাদক মোঃ মোজ্জাম্মেল হক চুটু জানান, আমাদের আম বাজার থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন জায়গায় প্রায় ৭’শ টন আম বাজার জাত হয়ে থাকে। এভাবে আগামী আগষ্ট মাসের ১৫/২০ তারিখ পর্যন্ত আম সরবরাহ অব্যহত থাকবে। এদিকে সরকার করোনা প্রতিরোধে কঠোর শাটডাউন ঘোষণা দিয়েছেন। এর আওতায় আম পরিবহণের জন্য ট্রাক বন্ধ করে দিলে আম পঁচে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এতে ভোলাহাট উপজেলার উপর তো দূরের কথা জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ফলে ক্ষতির মুখে জাতিকে যেন না পড়তে হয় সেদিকে বিবেচনা করে সরকারকে আম পরিবহনে ট্রাক শাটডাউনে আওতামুক্ত রাখার অনুরোধ করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, ভোলাহাট উপজেলায় এ বছর ৩হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হচ্ছে। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, আম পরিবহণে সরকার বাধা সৃষ্টি করবে না। আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে।
এস/আর