ভারত-পাকিস্তানের লড়াইটা টানটান উত্তেজনায় ঠাসা থাকবে, এমনটাই ধারণা করেছিল দুই দলের সমর্থকরা। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের লড়াইটা হলো স্রেফ একপেশে। ভারতীয় বোলারদের সামনে প্রথমে ব্যাট হাতে বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে ব্যর্থ হওয়া পাকিস্তান এদিন পাত্তা পায়নি ভারতীয় ব্যাটারদের কাছে। আফ্রিদি-রউফদের তুলোধুনো করে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন ভারতের রোহিত শর্মা। এরপর শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটে হেসেখেলে জিতল দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাবর আজমের ৫০ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান করেন ৪৯ রানের পরও ৪২.৫ ওভারে মাত্র ১৯১ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। জবাবে সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মার টর্নেডো ইনিংসের পর শ্রেয়াস আইয়ারের অপরাজিত ফিফটিতে ১১৭ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের জয় তুলে নিলো ম্যান ইন ব্লুজরা। এতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে ৭ বারের দেখায় শতভাগ জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল তারা।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের দেওয়া ১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণ চালায় ভারত। প্রথম বলেই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে বাউন্ডারি হাঁকান রোহিত। এরপর শুভমান গিলও আগ্রাসী ব্যাটিং করে দ্বিতীয় ওভারেই ৩ বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু পরের ওভারেই গিলকে বিদায় করেন শাহিন। শাদাবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১১ বলে ১৬ রান করেন তিনি।
এরপর দ্বিতীঊ উইকেটে ভিরাট কোহলিকে নিয়ে ৪২ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন রোহিত। দলীয় ৭৯ রানের মাথায় হাসান আলীর বলে মোহাম্মদ নওয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন কোহলি। ফলে ১৮ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৬ রানেই থামে ডানহাতি এই ব্যাটারের ইনিংস।
একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে রোহিত শর্মা ৩৭ বলে ফিফটি তুলে নেন। আফ্রিদি-রউফদের তুলোধুনো করে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে ৬৩ বলে ৬টি করে চার-ছক্কায় ব্যক্তিগত ৮৬ রানে সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক।
রোহিত ফেরার পর বাকি পথটুকু অনায়াসে পাড়ি দেন শ্রেয়াস আয়ার আর লোকেশ রাহুল। শ্রেয়াস ৫৩ আর রাহুল ১৯ রান নিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন। ৩০.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার ইমাম-উল-হক ও আব্দুল্লাহ শফিক। দেখেশুনে ব্যাট করে ভারতের বোলারদের ওপর চড়াও হচ্ছিলেন তারা। তবে ইনিংসের অষ্টম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শফিক। ২৪ বলে তিন চারে ২০ রানে ফিরেছেন তিনি।
এরপর ইমামকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখার মিশনে নামেন অধিনায়ক বাবর আজম। কিন্তু ভারতের চেপে ধরা বোলিংয়ে উইকেটে টিকে থাকতেই বেশি মরিয়া থাকতে হয় তাদের। তবে দলীয় ৭৩ রানের মাথায় আউট হয়ে যান ইমাম-উল-হক। ১৩তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ধরে ব্রেক থ্রু আসে। ইমামকে তিনি মাঠছাড়া করেন ৩৮ বলে ৩৬ রানে।
এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার মিশনে নামেন বাবর। দুজন মিলে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারে ভর করে বড় সংগ্রহের পথেই এগোচ্ছিল তারা। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম দুই ম্যাচের রানখরা কাটিয়ে ৫৭ বলে ফিফটিও তুলে নেন বাবর। কিন্তু ফিফটি করেই সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান পাক অধিনায়ক।
দলীয় ১৫৫ রানের মাথায় তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে বিদায় নেন বাবর। তার বিদায়ের পরেই তাসের মতো ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। এক ওভারেই জোড়া উইকেট শিকার করেন চায়নাম্যান স্পিনার কুলদ্বীপ যাদব। সৌদ শাকিলকে ৬ রানে এলবিডব্লিউতে ফেরানোর পর নতুন ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ ফেরেন ব্যক্তিগত ৪ রানে।
তবে একপ্রান্তে রিজওয়ান দাঁড়িয়ে থাকায় কিছুটা আশায় ছিল পাকিস্তান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জয়ের নায়ক রিজওয়ান এদিনও ফিফটির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। কিন্তু এক রান বাকি থাকতেই বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ফলে ৬৯ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৯ রানেই থামে তার ইনিংস। এরপর বাকিদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে বোলিংয়ে ভারতের হয়ে জশপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদ্বীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা প্রত্যকে দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
বিএ/