খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ক্রমশ দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হচ্ছে। আজ রোববার ভোর সাড়ে ৫টায় আবহাওয়া কার্যালয়ের সবশেষ ২৯ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, এটি এখন খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বইছে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া।
আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, আজ বিকেল নাগাদ ‘বুলবুল’ আরো দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলার লালমোহন, চরফ্যাশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলের নয় জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বহাল আছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।
ঢাকাস্থ আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি এর কেন্দ্রের মধ্যে ঘণ্টায় ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরো দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে বিকেল নাগাদ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বইছে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে, ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি কমে যাওয়ায় ক্ষয়-ক্ষতি কম হবে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গভীর রাতে আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তার শক্তি কিছুটা কমিয়ে ফেলেছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এইসব অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। এসব অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে এবং কিছু পরে পরে দমকা বাতাস ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। ক্রমশ দুর্বল ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগ দিয়ে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী দিয়ে কুমিল্লা হয়ে আগরতলা পর্যন্ত লঘুচাপ আকারে ধীরে ধীরে শেষ হবে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল হয়েছে। উপকূলের ১৪টি জেলায় প্রস্তুত ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকা প্রায় ২০ লাখ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ তৎপরতা মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে বুলবুল মোকাবেলায়। নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজ এবং বিমানবাহিনীর সব এয়ারক্রাফ্ট দুর্যোগ পরবর্তী যেকোনো সেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত শুক্রবার থেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ সব নৌপথে লঞ্চ ও জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর সব কার্যক্রম। সাগরে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ রোববারও সারাদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে। আগামীকাল সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, বুলবুলের প্রভাবে ভারতের ওড়িশা ও কলকাতায় ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় বহু গাছ উপড়ে গেছে। প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে।
খবর২৪ঘণ্টা, এমকে