নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৫ ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যূত্থানের মুখে পদত্যাগ করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর আওয়ামী লীগের প্রায় সব গুলো হেভিওয়েট নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, এমপি,মেয়র কাউন্সিলর, এবং হাসিনার মদদপুষ্ট কতিপয় পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। তবে এদের মধ্যে, গত বছর ১৩ আগষ্ট সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ১৫ আগস্ট, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ২৬ আগস্ট, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ২৯ আগস্ট, সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি ১৮ আগষ্ট, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহাজাহান খান ৫ সেপ্টেম্বর, সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু ৪ সেপ্টেম্বর, শেখ হাসিনার বান্ধবী ও সাবেক এমপি জোবেদা খাতুন পারুল ৬ সেপ্টেম্বর, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান ২ সেপ্টেম্বর, যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম ৩০শে আগষ্ট, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ২৭শে আগষ্ট, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্ণেল ফারুক খান ১৪ অক্টোবর, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ২৫ আগষ্ট (বর্তমানে জামিনে মুক্ত), আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার গ্রেফতার হয়েছে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচার শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে যে সমস্ত পুলিশের কর্মকর্তারা সাহায্য করেছিল তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ১৫ আগস্ট, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ৩ সেপ্টেম্বর, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, হাসিনার অন্যতম সহযোগী ও আয়নাঘরের অন্যতম জনক সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ১৬ আগষ্ট গ্রেফতার হয়েছে। এখনো পলাতক রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও এমপি আরাফাত রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক রাসিক মেয়র এসএইচ খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ হেভিওয়েট নেতারা এখনো পলাতক রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৮৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য পলাতক রয়েছে।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন,ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান ভাতের হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ প্রমুখ।
পলাতক নেতাকর্মী ও পুলিশের কর্মকর্তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে গত বছর ১৮ আগষ্ট আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫ আগস্ট গণ অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রাণ রক্ষার্থে রাজনৈতিক নেতা, বিচারক, আমলা সহ পুলিশ সদস্যসহ ৬২৬ নাগরিক বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেনানিবাসে আশ্রয় গ্রহীতাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের ২৪ জন নেতা, ৫ জন বিচারক, প্রশাসনের ১৯ জন কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৮৭ জন সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার ১২ জন ও ৫১ জন ছিলেন। এদের মধ্যে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ছেড়ে চলে যান এবং চারজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয় বলে আইএসপিআর এর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। গতকাল সোমবার (১১মার্চ) বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ড. কনক সরোয়ার তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র হতে পাওয়া সারা দেশের সেনানিবাসে ৬২৬ জন আশ্রয় গ্রহীতার মধ্যে ১৪৪ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন। যার
সারমর্মে বলা হয়েছে ২৪ জন রাজনৈতিক নেতা,২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা, ৪৮৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্য,৫ জন বিচারক, ১৯ জন প্রশাসনের কর্মকর্তা,১২ জন বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি এবং ৫১ জন আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ঢাকা সেনানিবাসে প্রাণভয়ে সাময়িক আশ্রয় নেন। তবে বাকী ৪৮৩ জনের কোনো নাম বা পরিচয়ের কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নি। প্রকাশিত উক্ত তালিকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম,কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা,ময়মনসিংহ, যশোর,সিলেট, ঘাটাইল ও বগুড়া সেনানিবাসে আশ্রিত ১৪৪ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত তালিকা অনুযায়ী পলাতক সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিআইজি(প্রধান সিটিটিসি) মো: আসাদুজ্জামান, সাবেক ডিজি( র্যাব) হারুন অর রশীদ, সাবেক স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার সহ প্রমুখ ব্যক্তি বর্গ ঢাকা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিল। উক্ত তালিকা অনুযায়ী রাজশাহী সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. হুমায়ূন কবির, উপ-পুলিশ কমিশনার ওমর ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এটিএম মাইনুল ইসলাম, এসপি রাকিব, ওসি বোয়ালিয়া হুমায়ুন কবির, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব (স্ত্রী ও দুই শিশু সহ)। এছাড়াও রাজশাহী সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন এমন ৩ জন নায়েক ও ১১ জন কনস্টেবলের নামও রয়েছে ।
বিএ…