বাঘা প্রতিনিধিঃ রেল লাইনের ত্রুটি দেখে ঠান্ডা নিবারণের লাল মাফলার দেখিয়ে একটি তেলবাহী ট্রেনকে দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা দুই শিশুকে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরুস্কার দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রেল দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা এই দুই শিশুর হাতে স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্র ও শীত নিবারন কম্বল পুরুস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষনিক ঘটনা জানার পর সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি দুই শিশুর লেখা-পড়ার সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের দুইজনেক প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নিজের অর্থায়নে বৃত্তি প্রাদন করবেন। এছাড়া দুই শিশু এসএসসি পাশের পর পূনরায় আলাদাভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি। দুই শিশুকে পুরুস্কার দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আড়ানী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শহীদুজ্জামান শাহীদ, সহসভাপতি সাইদুর রহমান, আড়ানী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রফিক, যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি শিক্ষক আমানুল হক আমান, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ফারুক হোসেন প্রমুখ।
জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আড়ানী রেল স্টেশনের কাছে এ ঘটনা ঘটে। স্টেশনের ৪০০ মিটার পূর্ব দিকে ঝিনা রেলগেটে রেললাইন ভাঙা দেখে দুই শিশু উপস্থিত বুদ্ধির জোরে চালক ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঝিনা গ্রামের দুই শিশুর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তারা দুইজন অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান। লিটনের বাবা সহিদুল ইসলাম গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে। আর মা মুনিয়ারা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে বড় ছেলে মিঠন (১০), মেজো ছেলে টিটন (৭), ছোট ছেলে লিটন (৫)। তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। রেলের জমিতে একটি টিনের ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে।
লিটনের মা মুনিয়ারা বেগম বলেন, আমার ছোট ছেলে লিটন আলী ট্রেন থামানোর পরে অনেকেই তার নাম জানতে চাইলে সে ভয় করে তার নাম টিটন বলে ফেলে। ছেলের এই কাজ দেখে সবাই সমাদর করছে। এই দেখে ভালো লাগছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আমার ছেলেকে দেখতে আসছে।
অপর দিকে সিহাব হোসেন বাবা সুমন হোসেন অন্যের জমিতে কাজ করে চার সদস্যের সংসার চালায়। এরাও রেলের জমিতে একটি টিনের ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছে। নিজস্ব কোন জমি নেই। সিহাবের বা রিতা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে। উভয় স্বামী-স্ত্রীর আয়ের টাকা দিয়ে কোন হালে সংসার চলে। সিহাবের আরেকটি সাকিল নামের দুই বছরের ভাই রয়েছে।
আড়ানী স্টেশনের কর্মরত মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন জানান, তেলবাহী ট্রেন চালক কেএম মহিউদ্দিন দুই শিশুর মাফলার দিয়ে সিগন্যাল লক্ষ্য করেন। এরপর চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। এই কারনে দুই ঘন্টা রাজশাহীর সব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে রেলওয়ের কর্তকর্তাদের জানানোর পর রেললাইন মেরামত করলে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
লাল মাফলার দিয়ে ট্রেন থামানো সেই দুই শিশু ঝিনা গ্রামের সুমন হোসেনের ছেলে সিহাব হোসেন (৬) ও একই গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে লিটন ইসলাম (৭)। তারা দুইজন পাশের এক ক্ষেত থেকে থেকে বাড়ি ফিরছিল। এই সময় রেল লাইন ভাঙা দেখে লাল মাফলার দিয়ে ট্রেনট থামিয়ে দেয়। তবে দুই শিশু স্থানীয় ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এরমধ্যে সিহাব হোসেন প্রথম শ্রেনি ও লিটন ইসলাম দ্বিতীয় শ্রেনির ছাত্র।
ট্রেন চালক কেএম মহিউদ্দিন জানায়, খুলনা থেকে রাজশাহীতে আসা হচ্ছিলো তেল। পথে আড়ানী স্টেশনের একটু দূরে ঝিনা রেলগেট এলাকায় লাইন ভাঙা দেখে সিহাব ও লিটন নামের দুই ছেলে মাফলার দিয়ে সিগন্যাল দেয়। প্রথমে ভাবলাম থামবো না, তার পরেও ট্রেন নিয়ন্ত্রন করে ভাঙা স্থান থেকে ২০ মিটার দুরে ট্রেন থামিয়ে দিলাম। ট্রেন থামিয়ে নেমে এসে দেখি রেল লাইন ভাঙা। পরে আড়ানী স্টেশন মাষ্টারকে জানানো হয়।
তেলবাহিী ট্রেনের পরিচালক আরশেদ আলী জানান, হটাৎ ট্রেন থামিয়ে নেমে দেখি রেল লাই ভাঙা। বিষয়টি রেলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষনিক অবগতি করার পর মিস্ত্রি এসে রেল লাইন মেরামত করিয়ে দেন। পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ