বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুত। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে সোলার সিস্টেম। ফলে গ্রামের মেঠোপথও এখন আলোকিত হচ্ছে। গ্রামের মোড় কিংবা ছোট বাজার ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে সৌরবিদ্যুতের আলো।
একটা সময় ছিল যখন রাতে গ্রামের মেঠোপথ মানেই ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। পথ চলতে অন্ধকারে গা শিউরে উঠত। পাড়া-মহল্লা ছিল ভুতুড়ে। সন্ধ্যা লাগলেই রাস্তায় দেখা মিলত না কোন মানুষের। তবে গ্রামের সে চিত্র এখন পাল্টাতে শুরু করেছে। গ্রামের মেঠোপথ, গোরস্থান, মসজিদ, মন্দির, এখন রাতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন নয়, গ্রামের অলিগলিতেও এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে সৌরবিদ্যুত।
ত্রান পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় সৌর বিদ্যুতে জ্বলছে এখন রাজশাহীর পদ্মার চরাঞ্চলসহ গ্রামীণ সড়ক বাতি।
উপজেলা ত্রাণ পুনবাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৬ সাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সোলার স্থাপন ও মেঠোপথে স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত তিন বছরে উপজেলার ইউনিয়নের মেঠোপথে ২৯৫টি স্ট্রিট লাইট বসানো হয়েছে। এছাড়াও দুটি পৌর এলাকায় স্ট্রিট লাইটের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সোলার হোম সার্ভিস সিস্টেমের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে গ্রামীণ সড়কেও সৌর বিদ্যুত আলো দিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় সৌর বিদ্যুতের এ সড়ক বাতি বসেছে।
উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মেঠোপথে স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ চলছে। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে, চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়ন এলাকার যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে, সেসব স্থানে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে আলো পৌঁছানো হচ্ছে। রাতের আঁধারে সৌরবিদ্যুতের আলোয় নিরাপদে মানুষ চলাচল করছে। রাস্তাগুলো আলোকিত হওয়ায় এখানে এখন রাতে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই কমে এসেছে। এখন রাত নামলেই আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাগুলো।
উপজেলার পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের গ্রামের অবস্থান একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল। সেখানে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেলে স্টিল লাইট। রাতে আলোকিত হয়েছে গ্রাম, রাস্তা।
দাদপুর চরের রেজাউল করিম জানান, আমাদের পদ্মার চরে কোন আলোর ব্যবস্থা ছিল না। গত বছর থেকে স্থানীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে চরের রাস্তায় স্ট্রিট লাইট দেয়া হয়েছে। এতে এলাকার চিত্রটা পাল্টে গেছে। এখন রাতে আলোময় হয়ে থাকছে। ফলে মানুষ রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারছে।
উপজেলা ত্রান পুনর্বাসন অফিসের সহকারি প্রকৌশলী হেকমত আলী জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুত ও বিদ্যুত সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারাদেশে গ্রামগঞ্জে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়েছে। এ সৌর বিদ্যুতের কারণে একদিকে বিদ্যুত সাশ্রয়ী হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামে মানুষ অন্ধকার থেকে আলোকিত রাস্তায় রাতে চলাচল করতে পারছে।
উপজেলা ত্রান পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, সোলার হোম সার্ভিস সিস্টেম বলতে গ্রামের মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বসানো লাইটকে বুঝানো হয়েছে। আর স্ট্রিট লাইট হলো, গ্রামের মেঠোপথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানুষের চলাচল বেশি। সেসব রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাকা রাস্তার মিডিলে ইত্যাদি। শুধু গ্রামেই নয়, সোলার বা সৌরবিদ্যুত পৌর এলাকাতেও অনেক দেয়া হয়েছে।
বাঘা টিআরকাবিখার প্রজেক্ট ইনচার্জ নেছার উদ্দিন বলেন, একটি লাইটের জন্য ৫৬ হাজার ৪০৯ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। উপজেলায় চলতি প্রকল্পের সকড়বাতির কাজ আগামী অর্থ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় শতভাগ বিদ্যুায়িত হয়েছে। তারপরও রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে।
বিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে গ্রাামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আগে লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় কাজ বন্ধ থাকলেও সৌর বিদ্যুতের কল্যাণে কম্পিউটার, ফ্যান ও লাইট জ্বলায় সেই দুরবস্থার মুক্তি মিলেছে। এতে উপকৃত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ উভয়েই।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই