বাগাতিপাড়া প্রতিনিধিঃ নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নড়ইগাছা মহল্লার সাকের আলীর আঙ্গীনায় তিনদিন ব্যাপি গ্রামীন ঐতিহ্য মনসা-মঙ্গল এর গানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে চলা এই গান গত শনিবার রাতে শেষ হয়। একমাত্র সন্তানের মঙ্গল কামনায় আয়োজন করা হয় এই গানের । এমনটি জানিয়েছেন গানের আয়োজক।
মনসা-মঙ্গল কাব্য মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অনন্য কীর্তি। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মনসা-মঙ্গল কাব্যের নানা আনুষ্ঠানিকতা প্রচলিত আছে। এগুলো বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোক নাটকের সম্পদ। এদের আছে আলাদা পরিবেশন রীতি, আলাদা আঙ্গিক। যাতে গ্রামীণ মানুষের আশা-আকাংখা আর জীবনের ভাবচিন্তা পরিস্কার বুঝা যায়। এই আয়োজন তাদের বেঁচে থাকার। সাধারণত রাত জেগে মনসা-মঙ্গলের গান পরিবেশন করা হয়। মনসা-মঙ্গলের এই পরিবেশনার পেছনেও রয়েছে নানারকম কারণ। যেমন মানত, ইচ্ছাপূরণ, বিনোদন ইত্যাদি। এছাড়া মানত পূরণে বছরের যেকোন সময়ই এর আয়োজন করা যায়। সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস চলে আসছে- মনসাদেবীর গান বা পূজা করলে তিনি বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন। তবে এই পরিবেশনার জন্য আলাদা আলাদা দলও আছে। কাহিনীর প্রধান চরিত্র হল- চাঁদ সওদাগর, বেহুলা ও লখিন্দর।
তারই ধারাবাহিকতায় মনসা-মঙ্গল এর গানের আয়োজন করা হয় উপজেলার নড়ইগাছা মহল্লায়। এই গানের আয়োজক সাকের আলী বলেন, তার ছোট ছেলেকে নিয়ে তার স্ত্রী পাশ্ববর্তী গ্রামে মনসা-মঙ্গল এর গান শুনতে যায়। তার স্ত্রী বাড়ি ফিরে রাতে স্বপ্নে দেখে তার একমাত্র সন্তানকে সাপে কামড় দিচ্ছে। তার সন্তানকে বাঁচাতে স্বপ্নের মধ্যে সন্তানের বিয়েতে মনসা-মঙ্গল এর তিনদিন গান দিবে এমন প্রতিশ্রুতি দেন । গান নাদিলে একমাত্র সন্তানের অমঙ্গল হবে এমন ভাবনা থেকে এ গানের আয়োজন করেছে।
এব্যাপারে লোকনাট্য গবেষক ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি মন্ডলির সদস্য কাজী সাইদ হোসেন দুলাল বলেন,এটা মধ্যযুগের বাংলা নাটক। এই গান যারা করে তারা গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারন দিনমজুর । আমাদের প্রয়োজনে একটি গানের দলকে যতসামান্য পারিশ্রমীক দিয়ে থাকি যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তারা এখন অনেকেই এই গান ছেড়ে জিবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। আমাদের এই গ্রামীন ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে সমাজের বৃত্তবান সংস্কৃতিমনা মানুষদের সহযোগীতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব প্রয়োজন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ