খবর২৪ঘণ্টা.কম,ডেস্ক: বরিশাল জেলার চিহ্নিত ১২৮ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর জেলা পুলিশ লাইনসে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করা ওই সব মাদক ব্যবসায়ীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তাদের আর্থিক সহায়তাসহ রিকশা, ভ্যান এবং সেলাই মেশিন প্রদান করে পুলিশ।
মাদকের ভয়াবহ পথ ছেড়ে আলোর পথে আসার কথা বলেন আত্মসমর্পণকারীরা। আর মাদকের বিস্তাররোধসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ভালো হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্যই এমন আয়োজন বলে জানালেন জেলা পুলিশ সুপার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েকশ’ মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গত পহেলা আগস্ট মো. সাইফুল ইসলাম বরিশালের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর জেলার ১০ থানা এলাকায় ওপেন হাউজ ডে এবং কমিউনিটি পুলিশিং সভায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোর পথে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। পুলিশ সুপারের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জেলার ১০ থানার ১২৮ জন মাদক ব্যবসায়ী বুধবার প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডিআইজি তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন এবং শপথবাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারীরা তাদের অন্ধকার জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা বলেন। আর কখনো মাদক বিক্রি কিংবা সেবন না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। তবে মাদকের বিস্তাররোধে পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে বলেও তারা মনে করেন।
বাকেরগঞ্জের মো. রাসেল বলেন, ১৪ বছর আগে মাদকের অন্ধকার পথে পা বাড়ান তিনি। মাদকের কারণে তার ঘর-সংসার তছনছ হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজন থেকেও তিনি বিচ্ছিন্ন। এখন শ্বশুর বাড়ি থাকেন। নিজের উপলব্ধি থেকেই গত ১ বছর আগে মাদক পরিত্যাগ করেছেন তিনি। এখন থেকে তিনি আর কখনো মাদক সেবন করবেন না। তবে দেশকে মাদক মুক্ত করতে হলে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের আরো দায়িত্বশীল এবং সৎ নিষ্ঠাবান হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। অর্থের বিনিময়ে যাতে কোন মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকসেবী ছাড়া না পায় সে দিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি করার কথা বলেন রাসেল।
আরেক আত্মসমর্পনকারী জুয়েল খান বলেন, তিনি মাদক বিক্রি এবং সেবন করতেন। মাদকের কারণে সমাজে তাকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। এ কারণে পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি আলো পথে ফিরে এসেছেন।
মেহেন্দিগঞ্জের মো. হাসান বলেন, তিনি নিজের উপলব্ধি থেকে মাদক ছেড়ে দিয়েছেন। এখন থেকে তিনি নিজে তো মাদক গ্রহণ করবেনই না, যে মাদক সেবন করবে তাদেরও পুলিশে ধরিয়ে দেবেন।
রিক্সাচালক মজিবর মুন্সি বলেন, মাদক সেবক কিংবা বিক্রি করলে মানুষ খারাপ বলে। তাই তিনি ভালো হতে চান। এ কারণেই পুলিশের আহ্বানে সারা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। এখন বাকী জীবন আর অন্ধকার পথে হাঁটবেন না।
আত্মসমর্পণের উদ্যোক্তা জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুধু শাসন নয়, ভালোবাসার মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তিনি। আত্মসমর্পণকারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সহায়তা। পরবর্তীতে তারা আবারও মাদক ব্যবসায় ফিরে যায় নাকি ভালো পথে চলে সেসব বিষয়েও নজরদারি করবে পুলিশ।
যাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা কিংবা দণ্ড রয়েছে তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। পূর্বের মাদক মামলায় যারা জামিনে আছেন তাদের এবং যাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে কিন্তু মামলা নেই তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অতীতে যাদের মাদক মামলা রয়েছে তাদের আইন অনুযায়ী আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ