সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ নভেম্বর ২০১৭
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে জমি দিতে রাজি না সংসদ সদস্য

অনলাইন ভার্সন
নভেম্বর ৩০, ২০১৭ ৪:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ঘণ্টা.কম,ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে থাকলেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় জমি দিতে রাজি হচ্ছেন না কোনো সংসদ সদস্য। দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক এ বিমানবন্দরটি নির্মাণ করতে হাজার হাজার স্থাপনা উচ্ছেদসহ প্রায় ২৮ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ভোটের ঠিক বছর খানেক আগে এমন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না কেউ। এ কারণে চূড়ান্ত বাছাইয়ে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের দুটি স্থান উত্তীর্ণ হলেও এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের উদ্যোগে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এ কারণে বিমানবন্দরটির নির্মাণ প্রক্রিয়া থমকে গেছে এমনটি বলা যাবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিমানবন্দরের স্থান চূড়ান্ত করার বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তিনি আরো পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, বেশি সময় লাগবে না। দ্রুতই রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হতে পারে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্থান সমীক্ষার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেডের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের দুটি স্থানকে চূড়ান্তভাবে উপযুক্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে এসডব্লিউপি-২ নামে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় একটি এবং এসডব্লিউপি-৩ নামে মাদারীপুরের শিবচর (চর জানাজাত) ও শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকা মিলিয়ে অন্যটির স্থান চিহ্নিত করা হয়। এ দুটি স্থানের মধ্যে যে কোনো একটিকে চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূরে আলম চৌধুরী লিটন প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার আপত্তির কথা তুলে ধরেন। বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে তিনি অবস্থান নিলেও নির্বাচনের আগে তার এলাকায় এটি করার ক্ষেত্রে আরো বিশদভাবে বিবেচনার দাবি তোলেন তিনি। ২০১০ সালে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ বন্ধের দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভের কথা তুলে ধরেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী স্থান চূড়ান্ত না করে আরো বিবেচনার জন্য বিমানমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। জানা যায়, একই ধরনের আপত্তি এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলেন বিমানবন্দরের জন্য সম্ভাব্য তালিকায় থাকা এলাকার আরো দুই সাংসদ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন বিমানমন্ত্রী। তবে সেই ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রতিবেদন জমা পড়েনি বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেবিচকের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্থান নির্বাচন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ কিলোমিটার প্রস্থের বিমানবন্দর এলাকার জন্য ২৭টি স্থানকে প্রাথমিক বিবেচনায় এনে কাজ শুরু করে। ঢাকা থেকে দূরত্ব, জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের ধারা, জাতীয় মহাসড়ক থেকে দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় এনে সেখান থেকে ১০টি স্থানকে পরবর্তী তালিকায় আনা হয়। এরপর এয়ারস্পেস, ভূমির প্রাপ্যতা, দুর্যোগের ঝুঁকি, প্রকল্প খরচ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় এনে তালিকা আরো ছোট করে ৩টিতে নামিয়ে আনা হয়।

ওই তিনটির মধ্যে মানিকগঞ্জের আটিগ্রাম, সিংগাইরের তালিবপুর ও ধামরাইয়ের শুয়াপুর এলাকাগুলো মিলিয়ে বিমানবন্দরের জন্য এনডব্লিউউ-১ নামে একটি স্থান চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয়টি এসডব্লিউপি-২ নামে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর, মাহমুদপুর, চিকনদি, দোমাসার, চন্দ্রপুর, তুলাসর ও চিতলিয়া ইউনিয়নে এবং তৃতীয়টির স্থান নির্বাচন করা হয় এসডব্লিউপি-৩ নামে মাদারীপুরের শিবচরের উমেদপুর, দ্বিতীয়কান্দা, কাদিরপুর, কুতুবপুর এবং জাজিরার বড় গোপালপুর, সেনেরচর এবং বড় কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন জুড়ে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে আকাশপথে বিমান ওঠানামার নিরাপদ দূরত্ব কম থাকায় মানিকগঞ্জকে পরে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বাকি দুটি স্থানের তালিকা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় নিপ্পন কোয়ি।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, শরীয়তপুরে বিমানবন্দরটি করতে গেলে ৮ হাজার ৬৫০টি পরিবারকে তাদের বসত ভিটা থেকে স্থানান্তর করতে হবে। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দিরসহ স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে ১৫০টি। আর ১ হাজার ৫৬ একর আবাসিক ও ২৭ হাজার একর কৃষি জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে এ স্থানের দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। অন্যদিকে শিবচর অংশে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করতে ৮ হাজার ৪৮০টি পরিবারকে স্থানান্তর করতে হবে। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে ১০০টি। আর ১ হাজার ২২২ একর আবাসিক ও ২৬ হাজার ৭৫ একর কৃষি জমি বিমানবন্দরের জন্য নিতে হবে। জিরো পয়েন্ট থেকে এখানকার দূরত্ব ৫৯ কিলোমিটার। এই দুই স্থানের ৯০ ভাগ জমিই ব্যক্তিমালিকানাধীন। মাত্র ১০ ভাগ জমি সরকারি বা খাস রয়েছে।

এ দুটি স্থানের মধ্যে চূড়ান্ত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ১৩টি বিষয় র‌্যাংকিং করে নিপ্পন কোয়ি। এর মধ্যে দুটি স্থানকেই শাহজালালের সঙ্গে আকাশসীমার নিরাপদ দূরত্বে তিন তারকা বা সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যান্য মূল্যায়নেও পাশাপাশি অবস্থান করে স্থান দুটি। ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ওপরই চূড়ান্তভাবে নির্ভর করতে হয় তাদের।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার বিষয়টি ছিল আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারের ১৫-এর ৬ দফায় বলা হয়, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংযোগস্থল হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। এ ধারণাটি মূলত খোদ প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত। তাই সরকার গঠনের পরপরই বিমানবন্দরটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬২ সালে বর্তমান শাহজালাল বিমানবন্দরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। এ বিমানবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বছরে ৮০ লাখ ও কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা ২ লাখ টন। কিন্তু বর্তমানেই শাহজালালে প্রতিবছর যাত্রী ৭০ লাখ পারাপার হচ্ছে। আর দুয়েক বছরের মধ্যেই এখানে সক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী হবে। অন্যদিকে গত ৪ বছর আগে থেকেই সক্ষমতার চেয়ে বেশি কার্গো হ্যান্ডেলিং হচ্ছে এ বিমানবন্দর দিয়ে। এ অবস্থায় নতুন বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত শুরু করতে না পারলে এ খাতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।