দুর্গাপুর প্রতিনিধি: এক সময় সেলাই মেশিনের কাজ করতেন। এরপর গ্রাম-গঞ্জে কাপুড় নিবেন, কাপুড় -ডাক হাঁকিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতেন শাড়ি কাপুড়। দুর্গাপুরের আলীপুরের এই হাবিবুর রহমান হাবিব এখন কোটিপতি। বর্তমানে বৈধ ব্যবসা না থাকলেও টাকার হিসাব-নিকাশ রাখতে তার রয়েছে লম্বা টালি খাতা। গ্রামের বাড়িতে উঠেছে আলিশান ৩তলা বাড়ি, করেছে সহায়-সম্পদও। কী করে এই অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি? প্রশ্ন স্থানীয়দের। হত্যা, মাদকব্যবসা ও প্রতারণাসহ না অপকর্ম করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। ফেরিওয়ালা থেকে অসুদাপায় কোটিপতি হয়ে ধনে পোদ্দারি করলেও শেষ পর্যন্ত বাগমারা উপজেলা চাঞ্চল্যকর মা ও ছেলে হত্যাকান্ডে ভাড়াটে হিসেবে খুন করায় ফাঁসির দন্ড হয়েছে তার। গত বুধবার বাগমারায় মা ও ছেলে হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন রাজশাহী দ্রæত বিচার ট্রাইবুন্যাল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা,
প্রতারণা ও মাদক দ্রব্য নিয়ে একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আলীপুর গ্রামের খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০)। তার বাবার নাম আবুল কাশেম। অভাবে কারণে হাবিব পড়াশোনায় ৫ম শ্রেনির গন্ডি পার হতে পারেনি। সে প্রথমে সেলাই মেশিনের কর্মচারি হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে হাবিব গ্রাম-গঞ্জে সাইকেলে ফেরি করে কাপুড় বিক্রি শুরু করেন। হঠাৎ ২০০৬সালে তিনি স্থানীয় আলীপুর বাজারে হাবিব এন্টার প্রাইজ নামে মোটরসাইকেল শো রুম চালু করেন। সেখান থেকে হাবিব মাদকব্যবসায়ী ও প্রসাশনের ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। নিজের শো রুমে বসে ভিআইপি ব্যাক্তিদের সাথে মাদক সেবন ও সরবরাহ চালিয়ে গেছেন। সেখান থেকেই হাবিব রহস্যজনকভাবে কোটিপতি হয়ে উঠেন। ২রুম বিশিষ্ট মাটির বাড়ি থেকে এখন আলিশান ৩তলা ফ্লাট বাড়ি তার। পরে হত্যা, প্রতারণা ও মাদক মামলায় একাধিক বার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হোন তিনি। চলিত বছরে মা ও ছেলে হত্যা মামলায় কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো থানা পুলিশের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়। বর্তমানে তার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে তার হাবিব এন্টার প্রাইজ মোটরসাইকেল শো রুম আর নেই।
প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যম সুত্রে জানা গেছে, বাগমারার দেউলা গ্রামে নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা।
সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এরপর এই হত্যাকান্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে দুইজনেক দায়ী করা হয়। তারা হলেন- নিহত আকলিমা বেগমের দেবর আবুল হোসেন মাস্টার এবং তার সহযোগী ভাড়াটে হাবিবুর রহমান হাবিব। এছাড়াও হাবিবের সাথে আরো ৫জন ভাড়াটে হিসেবে সহযোগী ছিলেন। এদের বাড়িও দুর্গাপুর উপজেলায়। তারা হাবিবের পার্টনার হিসেবে কাজ করতেন।
এস/আর