খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: প্রত্যাখান নয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে আশস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আপিল শুনানিতে থাকার অনুরোধ কামাল হোসেন প্রত্যাখান করেছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে ‘প্রত্যাখান’ করেছে। এটা তো ঠিক নয়। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদের বিবৃতি দিতে হয়েছে। এটা সত্য নয়। আর এর ফলে তাকেও (কামাল হোসেন) খাটো করা হয়েছে। উনি প্রত্যাখান করেননি। উনি অত্যন্ত সিমপ্যাথিভাবে কথাগুলো শুনেছেন। এ ধরনের মামলায় বেগম জিয়ারা সাজা দেয়া উনি পছন্দ করেননি- বলেও তিনি জানিয়েছেন।
কামাল হোসেনের সাথে রাজনৈতিক কোন বিষয়ে কথা হয়নি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মামলার বিষয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। আর উনি আমাদের আশস্ত করেছেন, উনি বিষয়টি পড়ে আমাদের মতামত ও পরামর্শ দিবেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যাালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি এ কথা জানান।
আমরা এখন আসামী হয়ে গেছি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আইনের বিভিন্ন মারপ্যাচে পড়ে এবং সরকারের যে কৌশল, বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাদের ঘায়েল করে ফেলা। এই কৌশলের ফলে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে যে সাজা দেয়া হয়েছে। সেই ব্যাপারে আইনী পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা ড. কামাল হোসেনের কাছে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন গিয়েছি, তখন সেখানে গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। তিনি সব কিছু জানতে চেয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান তাকে ব্রিফ করেছেন। রায়ের কপি উনাকে দেয়া হয়েছে। উনি বলেছেন, অনেক বড়। এটা আমি পড়বো। পড়ে আমি আমার মন্তব্য জানাবো এবং পরামর্শ দেবো।
তবে দুর্ভাগ্য আমাদের। যারা এই বিষয়ে রির্পোট করেছেন তারা আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ মনে করেননি। তাই আমি বলতে চাই, যখন ড. কামাল হোসেনের মত ব্যক্তিরা থাকবেন এবং যখন আমাদের দলের বিষয় হবে তখন দয়া করে আমাদের সাথে কথা বলবেন, তাহলে এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে না।’
বিএনপির কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচিতে পুলিশী হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের ব্লু প্রিন্টের অংশ। কারণ তারা (সরকার) বিএনপিকে জনগণ কাছে ও মাঠে থাকতে দিতে চায় না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা ও রায়ের পরে এ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির ৫ হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এভাবে দমন-পীড়ন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না এবং বিএনপিকেও ভেঙ্গে ফেলা যাবে না। বিএনপিকে তার মূল লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দেয়া যাবে না।’
নির্বাচন কমিশনকে বিএনপির চিঠি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ইসিকে যৌক্তিকভাবেই চিঠি দিয়েছি। কারণ যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। যখন প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী কারাগার, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হচ্ছে না। এসময় প্রধানমন্ত্রী দেশে ও দেশের বাইয়ে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় খরচে জনসভা করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। আমাদের যে কথা, লেভেল প্লিয়ং ফিল্ড তৈরী করা এবং সকল দলকে সমাজ সুযোগ দেয়া, সেটা এটা থেকে সম্পূর্ণ পরিপস্থি। নির্বাচনের কমিশনের দায়িত্ব এটাকে বন্ধ করা। সকলকে সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। আর এটা বন্ধ না করলে প্রমাণিত হবে ইসি পুরোপুরিভাবে সরকারকেই সহযোগিতা করছে- বলেন ফখরুল।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা লাগে কারণ সবাই জানতে চায়, জাতীয় পার্টি সরকারি দল না বিরোধী দল- বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত তিনি বলেন, তাহলে মনে করেন, এই সংসদের বিরোধী দলের নেত্রী করুন আবেদন করছেন, আমাদেরকে বাঁচান। সংসদের নেত্রী আপনিই বলেন, আপনি কি? এটা আসলে পরিচয়বিহীন বলা যায়! এই থেকে বুঝা যায় সংসদ ও সংবিধানের অবস্থাটা কি। সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আছে কি না, সেটা জনগণ বলবে। সুতরাং বিরোধী নেত্রী বক্তব্যে প্রমান করেছে, আসলে দেশে কোন গণতন্ত্র নেই।
বিএনপির আইনজীবী চাচ্ছেন খালেদা জিয়া জেলে থাকুক- আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সমস্যাটা এখানে নয়। সমস্যা হচ্ছে, তারা পূর্ব নির্ধারিত ছক করেছে। আর সেই ছক অনুযারি তারা মামলা করেছে। সুতরাং বিচার ও রায় তাদের পূর্ব নির্ধারিত। আর দেশনেত্রীর রায়ের ব্যাপারে আমরা শুধু হতাশ নই, আমরা অত্যান্ত ক্ষুব্ধ।
১৫ কার্য দিবসের মধ্যে রায়ের কপি নিম্ন আদালতে পাঠানোর বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন সেই দিনেই হওয়ার কথা। কিন্তু সেই দিন জামিন না দিয়ে বলছে, ১৫ দিনের মধ্যে রায়ের কপি নিন্ম আদালতে পাঠাও। খালেদা জামিন ঢিলা করার সরকারের এটা একটা নীল নকশা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, তাদের (সরকার) নীল নকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাদের সেই নীল নকশা হলো, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ও নির্বাচনের বাইয়ে রাখতে চায়। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তারা (সরকার) মামলাগুলো সাজাচ্ছে এবং করছে।
এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী উপস্থিত ছিলেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ