পাবনা প্রতিনিধিঃ আজ ১৯ এপ্রিল ঐতিহাসিক শহীদনগর (ডাববাগান) দিবস। পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আজকের দিনটি একদিকে যেমন বীরত্বে গাঁথা তেমনি আরেকদিকে বেদনার। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাঁথিয়া উপজেলার শহীদনগরে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে ১৭ জন ইপিআর সদস্যসহ উভয় পক্ষেরই প্রচুর প্রাণহানীসহ পাকবাহিনীর গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যা পাবনা জেলার মধ্যে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজরিত এই দিনটি এলাকার জনসাধারণসহ মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করে আসছেন। এদিনে যে সব ইপিআর সদস্য শহীদ হন তারা হলেন, হাবিলদার ইমান আলী, মুনির উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক আতিয়ার রহমান, সালেহ আহমেদ, সিপাহী নুর উদ্দিন, মোহাম্মদ ইলিয়াস, আবুল হোসেন, গোলাম মোস্তফা, রফিকুল ইসলাম আবুল কাশেম, ইদ্রিস আলী, মেনারুল হক, আবির হোসেন, সাইফুর রহমান, শরীফ উদ্দিন, মোজাম আলী ও মোন্নাফ আলী।
শহীদনগরের অবস্থান পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাবনা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে। আগে এর নাম ছিল ‘ডাববাগান’। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ডাববাগান পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ‘শহীদনগর’।
পাকবাহিনীর সঙ্গে ১৯৭১ সালের সেদিনের যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, তৎকালীন ইপিআর সুবেদার আলী আকবরের নেতৃত্বে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে আঘাত হানার চরম প্রস্তুতি গ্রহন করে। মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই খবর পান পাকবাহিনীর একটি বহর ১৯ এপ্রিল নগরবাড়ী থেকে বগুড়ার দিকে যাবে। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদনগরে ওঁৎ পেতে থাকেন। পাবনা-বগুড়া সড়ক ধরে পাকবাহিনীর বহরটি দুপুরের দিকে শহীদনগরে আসা মাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে পাকবহরের ওপর। মূহুর্তের আক্রমনে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তারা তা সামলে পাল্টা আঘাত করে। উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধে ১৯ জন প্রতিরোধকারী মুক্তিযোদ্ধা ও ৬ জন গ্রামবাসী নিহত হন। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
যুদ্ধে পাকবাহিনীরও প্রচুর জানমালের ক্ষতি হয়। সেদিনের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ও আনসার আলীসহ কয়েকজন মুিক্তযোদ্ধা জানান, সঠিকভাবে নিরূপন করা না গেলেও সেদিন শতাধিক পাকসেনা নিহত হয় বলে অনুমান করা হয়। তাছাড়া তাদের যানবাহনসহ প্রচুর গোলাবারুদও ধ্বংস হয়ে যায়। সেদিনের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, ‘শহীদনগর যুদ্ধ বেড়া-সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ঐ যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য পাকবাহিনীর মনোবলে মারাত্বক চিড় ধরে, আর নিজেদের প্রাণহানী সত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে ওঠেন চাঙ্গা।’
এদিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে শহীদনগরে ২০০১ সালে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের উদ্যোগে ‘বীর বাঙালি’ নামের একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবছরের ১৯ এপ্রিল সেখানে গিয়ে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে থাকেন।
এদিকে এ বছর দিনটি পালন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করা হবে। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃহস্পতিবার ওই স্থানে নির্মিত স্মৃতিসৌধ স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ