মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী: এখনকার দিনের মত আমাদের বাবা মা কখনোই স্কুলে আনা নেয়া করেন নি।এখনকার বাবা মা অতি সচেতন। তারা সন্তানকে একা একা স্কুলে পাঠান না।স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে আসার ব্যাপারে বাবা মা নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করে। এখনকার বাবা মা সন্তানদের লিখাপড়ার ব্যাপারে অতি সচেতন কিন্তু আমাদের সময় আমরা নিজেদের মত একাই পথ চলেছি।হয়তো আমাদের বাবা মা আমাদের একা ছেড়ে দিয়ে ভরসা পেতেন।
আমার স্কুল জীবনে সকাল বেলা কোন কোন দিন পান্তাভাত,কাচামরিচ,পেয়াজ দিয়ে পেট ভরে খেয়ে স্কুলে রওনা দিতাম।স্কুলে দুপুর বেলা টিফিন হিসাবে স্কুল থেকে দিত কোন দিন কলা,কোনদিন সিংগারা,কোনদিন নিমকি,কোনদিন পুরি খেতে দিত একটা করে। তা খেয়েই আমাদের বিকাল সাড়ে চারটার প্রযন্ত ক্লাস করতে হতো। স্কুল থেকে এসে সামান্য কিছু খেয়ে বন্ধুদের সাথে মাঠে যেতাম খেলতে। এখনকার বাচ্চাকাচ্চাদের তো খেলাধুলার মত কোন মাঠই নেই। আমি ক্লাস এইট থেকে করনেশন স্কুলে লিখাপড়া শুরু করি।রুগ্ন প্রকৃতির ছিলাম অর্থাৎ সাস্থ্য ভাল ছিলো না। ইমিডিয়েট ছোট ভাই সাজুরও স্বাস্থ্যের একই অবস্থা।
যখন ছোট ছিলাম,আমার পৃথিবী ছিলো বাবা,মা,ভাই,বোন।কাউকেই একদিন না দেখতে পারলে ভালোই লাগতো না,ঘুম হতোনা।বাবা মায়ের আদর স্নেহ সারাক্ষণ মোহগ্রস্ত করে রাখতো। আমি আবার ছোট বেলায় অত্যান্ত স্বাস্থ্যহীন ছিলাম।জামা খুললে বুঝা যেতো। ডাক্তারের কাছে গেলে চিকিৎসার জন্য আমার এক্সরে করার কোন প্রয়োজন হতো না। আমার দেহের কাঠামো দেখেই ডাক্তার লিভার,কলিজা সহ ভিতরে অরগান ভাল ভাবেই দেখে চিকিৎসা দিতে পারতো।
এমন স্বাস্থ্য পিতার চিন্তার কারণে আমাকে সহ আমার ছোটভাইকে কাটনার পাড়া জিমনেসিয়ামে নিয়ে গিয়ে মতি ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে মতি ভাইকে বলে দিলেন এদের সুস্বাস্থ্য দেখতে চাই।তখন ক্লাস এইটে পড়ি।সেই থেকে নিয়মিত জিমে গিয়ে শরীরচর্চা শুরু হলো। বাবা শরীরের পুস্টির জন্য কাচা ছোলা,ডিম,দুধ,কলা ইত্যাদির ব্যাবস্থা করতেন।পড়াশুনার পাশাপাশি জিম চালিয়ে যেতে থাকলাম।এরসংগে মুস্টিযুদ্ধের প্র্যাকটিস, জুডোর প্র্যাকটিস চালিয়ে যতে থাকলাম।ধীরে ধীরে শরীরের গঠন মজবুত হতে শুরু হলো। বাবা স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখে বেশ খুশি ছিলেন।বাবা ঐ জিম প্রতিস্টার সাথে জড়িত ছিলেন।বাবাও একসময় ঐ জিমে নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন।এভাবেই গ্রাজুয়েশন প্রযন্ত শরীরচর্চা অব্যাহত রাখলাম।
আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাই সাজু আমার দুই বছরের ছোট। দুজনের মধ্যে কারনে অকারণে ঝগড়া হতো। মারামারি, হাতিহাতি হতো। মারামারি করে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তাম তখন বিরতি হতো।সে আবার লিখাপড়ায় খুব কাচা ছিল।পড়ার জন্য বাবার হাতে প্রায়ই মার খেতো।ঝগড়ার পর আবার যখন আমাদের মিল হতো তখন একসংগে আড্ডা মারতাম।
বাজার করা নিয়ে দুজনের ভিতর মাঝেমধ্যে ঝগড়া হতো। কেউ বাজারে যেতে চাইতাম না।তাই মায়ের অনুরোধে একদিন আমি বাজারে যেতাম,অন্যদিন সে যেতো।
নকলবাজ হিসাবে ওস্তাদ ছিলো। কেমন করে নকল করে পাশ করতে হবে,সেই কৌশল খুজাই ওর আপ্রান প্রচেষ্টা ছিল খুব বেশি। লিখাপড়া নিয়েও বাবা মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলতো।ওর ভাল বুদ্ধির চেয়ে দুস্ট বুদ্ধি মাথায় ভাল কাজ করতো।
স্কুলে একদিন বিজ্ঞান ক্লাসে আশ্রাফ স্যারের ক্লাস ছিলো, পড়া ধরেছিলো।পারিনি, তাই শাস্তি পেতে হলো। স্যার আমাকে দুহাত সামনে বাড়িয়ে দিতে বললেন। আমি ফুলহাতা জামার হাতা তুলে দুহাত স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিলাম।স্যার দুটো লাঠি দিয়ে একসংগে দু’হাতের কনুই প্রযন্ত সপাং করে একটা আঘাত করলেন স্বজড়ে, সাথে সাথে দু’হাতের কনুই প্রযন্ত দুটি রক্ত লাল রেখা তৈরি হয়ে গেলো।
সেকি যন্ত্রণা, সইতে পারছিলাম না।দুচোখ বেয়ে জলের ধারা বইতে শুরু করলো। স্যার,বললেন হাত নামা।এরপর থেকে পড়া ঠিকঠাক করে নিয়ে আসবি।তা নাহলে এরচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। বাড়ী ফিরে তিন চার দিন জামার হাতা উঠাইনি মা বাবা দেখে ফেলার ভয়ে।গায়ে জ্বর এসেছিল।তাও জানাইনি বাসায় লজ্জায়।নিজে গোপনে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ঔষধ এনে খেয়েছি।ডাক্তারের কাছে যখমের সত্য কথা বলতে হয়েছিলো। ডাক্তার শুনে বললেন এভাবে কি শাসন করে? এ কেমন শিক্ষক?
(চলবে)
মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার