দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও শিক্ষানগরী রাজশাহীতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। ৩ জুলাই শনিবার সকাল থেকে দিনভর নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে চেকপোস্ট পরিচালনা করতে দেখা যায়। এ কারণে ছোটখাটো যানবাহনও চলাচল অনেক কমেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা বললেই চলে। মোটরসাইকেল নিয়েও বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছেনা। অপ্রয়োজনে যারা বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও কোনো দোকানপাট খুলতে দেয়া হচ্ছেনা।
সরকারী ছুটির দিন শুক্রবারও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছোটখাটো যানবাহন ও তেমন মানুষকেও রাস্তায় দেখা যায়নি। লকডাউনের প্রথম দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হওয়ার কারণে নগর ও আশেপাশের উপজেলায় মানুষজনের যাতায়াত ছিল আরো কম। তুলনামূলক অন্যান্য লকডাউনের তুলনায় এবার রাস্তাঘাট ও একেবারেই ফাঁকা ছিল। সকাল থেকেই দোকানপাট বন্ধ ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ দ্রæত বেড়ে যাওয়ায় গত জুন মাসের ১১ তারিখ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত প্রথম দফায় ৭ দিনের সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৭ জুন ৭ দিন শেষ হওয়ার পরে সংক্রমণের হার না কমায় আরো ৭ দিন লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয় রাজশাহীর স্থানীয় যৌথ প্রশাসনের সভায়। তারপরেও সংক্রমণ না কমায় নগরীতে
আরো ২৪ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আবারো লকডাউন বাড়িয়ে দেয়া হয়। শিক্ষানগরী রাজশাহী প্রায় পুরো মাস জুড়েই কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে ছিল। এরপরও রাজশাহীতে মৃত্যু ও শনাক্তের হার অনেক বেশি ছিল। শুধু রাজশাহী নয় অন্যান্য দেশের অন্যান্য জেলাতেও হার বাড়ায় ১ জুলাই থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের তৃতীয় দিনে এসে নগরে প্রশাসনের তৎপরতা আরো বেড়েছে। অপ্রয়োজনে বের হওয়াদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে জরুরী কোনো কারণ দর্শাতে না পারলে জরিমানা করা হচ্ছে।
শনিবারও রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ও ট্রেন চলাচল করেনি। সব ধরণের গনপরিবহন বন্ধ রয়েছে। নগরের অভ্যন্তরে কিছু রিক্সা ও দুই/একটি অটোরিক্সা চলাচল করলেও তা খুবই কম। এসব রিক্সাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরী সেবায় নিয়োজিত মানুষজন এসব রিক্সায় যাতায়াত করছে এমনটাই জানিয়েছেন রিক্সা চালকরা। তবে পাড়া-মহল্লায় কিছু মানুষের আড্ডা এখনো রয়েছে। ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল কম থাকায় মানুষ পাড়া-মহল্লায় একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।
সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল ছিলনা।
এ পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৫ জনের। শনাক্তের বেশির ভাগ রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১৪ হাজার ৫৩৭ জন। বাঘা উপজেলায় ৪০৪ জন, চারঘাট উপজেলায় ৪৫০ জন, পুঠিয়া উপজেলায় ৪২৯ জন, দুর্গাপুর উপজেলায় ৩৬২ জন, বাগমারা উপজেলায় ৩৫১ জন, মোহনপুর উপজেলায় ৩০৩ জন, তানোর উপজেলায় ৩৩৩ জন, পবা উপজেলায় ৪৫২ জন ও গোদাগাড়ীতে ৩১৪ জন। রাজশাহী জেলায় শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ। রাজশাহী জেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ১২ এপিল ও নগরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৫ মে। জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৭১ জনের।
এস/আর