তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের বড় ধরনের ভূমিকম্পে ৪ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়াদের উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
দেশটিতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পরে কয়েক ডজন দেশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমবার ভোরে মানুষ যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে জরুরি উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তুরস্কে ৫ হাজার ৬০৬টি স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে বহুতল আবাসিক ভবনগুলো ছিল মানুষে পরিপূর্ণ। এ ছাড়া আলেপ্পোতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি কয়েক ডজন ভবন ধসের কথা জানিয়েছে সিরিয়া।
তুরস্কের দুর্যোগ পরিষেবা বিভাগের প্রধান ইউনুস সেজারের তথ্যমতে, তুরস্কে কমপক্ষে ২ হাজার ৯২১ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
প্রতিবেশী সিরিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৪৫১ জন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৭১১ জন মারা গেছে। তাদের বেশির ভাগই আলেপ্পো, হামা, লাতাকিয়া ও তারতুস অঞ্চলের বাসিন্দা।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কাহরামানমারাসের ২৩ বছর বয়সী সাংবাদিক মেলিসা সালমান বলেন, এবারই প্রথম আমরা এ ধরনের কিছু দেখছি। এটি মহাবিপর্যয়।
সিরিয়ার ন্যাশনাল আর্থকোয়েক সেন্টারের প্রধান রায়েদ আহমেদ এটিকে ‘ইতিহাসে তাদের রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পথ বলে অভিহিত করেছেন।
সোমবার প্রথমে ভূমিকম্পের পর কয়েক ডজন আফটারশক হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন, যা অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ চলাকালে অঞ্চলটিকে ঝাঁকুনি দেয়।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিয়ারবাকিরের ৩৫ বছর বয়সী হ্যালিস আকতেমুর বলেন, আমরা তিনজনকে বাঁচাতে পেরেছি, কিন্তু দুজন মারা গেছে।
তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যাওয়া সত্ত্বেও শহরটির আতঙ্কিত বাসিন্দারা উষ্ণতার জন্য আগুনের ব্যবস্থা করে রাস্তায় রাত কাটানোর প্রস্তুতি নেয়।
এদিকে, ভূমিকম্পের ঘটনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরেদোয়ান সাত দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এরদোয়ান টুইটারে বলেন, আমাদের সরকারি ও বিদেশি সব দপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
৮৪ বছরের মধ্যে তুরস্ক এত শক্তিশালী ভূমিকম্প দেখেনি। সবশেষ ১৯৩৯ সালে উত্তর-পুর্ব তুরস্কে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। তখন প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইজমীতে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল।