খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক:জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে। পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে ভাই জিএম কাদেরকে অব্যাহতির ১৮ ঘণ্টার মাথায় বিরোধী দলের উপনেতা পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দিয়েছেন এইচ এম এরশাদ।
গতকাল বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সাংগঠনিক নির্দেশনায় এ কথা জানানো হয়। ভাইয়ের পরিবর্তে স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে মনোনীত করেন এরশাদ। এর মধ্য দিয়ে জাপায় সেই পুরনো গৃহবিবাদ আবারও শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে এক সাংগঠনিক নির্দেশনায় জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই মহাসচিবের পদ থেকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে জাপায় শুরু হয় অস্থিরতা। এই অস্থিরতার নতুন মাত্রা পায় শুক্রবার মধ্যরাতের একটি প্রেস রিলিজকে কেন্দ্র করে। ওই রাতে জাতীয় পার্টির বনানীর অফিস থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে
সাংগঠনিক নির্দেশ নামে যে প্রেস রিলিজ পাঠানো হয় তাতে পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে জিএম কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়। সাংগঠনিক নির্দেশে এরশাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও জানানো হয়, ইতিপূর্বে এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে পার্টির ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেছিলেন।
এরশাদের অবর্তমানে পার্টির সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেন জিএম কাদেরকে। কিন্তু জিএম কাদের তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে প্রেস রিলিজে জানান জাপা চেয়ারম্যান। সেই কারণে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। হঠাৎ করে এই প্রেস রিলিজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই জাতীয় পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
দেখা দেয়। বিশেষ করে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত জাতীয় পার্টির অনেকেই প্রথমে এই প্রেস রিলিজকে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন। অনেকেই আবার এই প্রেস রিলিজকে সত্য উল্লেখ করে এর জন্য দলের অনেক নেতাকে দায়ী করেন।
কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রসঙ্গে জিএম কাদের শুক্রবার রাতে বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কারণ বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে এরশাদ সাহেব বলেছিলেন, তুমি (জিএম কাদের) খুব ভালো করছো। আমি (এরশাদ) তো আর বেশি দিন বাঁচব না, তুমি দলটাকে বাঁচিয়ে রেখো। আমি জানি তা তুমি পারবে।’ তবে শনিবার বিকালে উপনেতার পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে জানার জন্য জিএম কাদেরকে একাধিক ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, শুক্রবারের প্রেস রিলিজে এরশাদ স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া শনিবার সকালে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করেও ভাই এরশাদের সাক্ষাৎ পাননি জিএম কাদের। এ সময় তার সঙ্গে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে এরশাদের সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে যান। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা এক প্রকার লেজেগোবরে হয়ে গিয়েছিল।
বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগকে কেন্দ্র করে জাপায় ছিল অস্থিরতা। গত ৭ জানুয়ারি দলের কো-চেয়ারম্যান ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করে সাংগঠনিক নির্দেশ প্রদান করেন এরশাদ। তার এই সিদ্ধান্তে দলের তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর সমর্থন থাকলেও বেঁকে
বসেন দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা। এ প্রসঙ্গে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কে কোন পদে থাকবে সেটা এরশাদ সাহেব ভালো বলতে পারবেন। জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, যা ঘটেছে তা দুই ভাইয়ের মধ্যে হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। বিডি প্রতিদিন
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন