বয়স পঁচানব্বই। বার্ধক্য ও রোগভোগের ছোবলে হাঁটাচলা বন্ধ, বিছানায় কোনোমতে পাশ ফিরতে পারলেও উঠে বসার ক্ষমতা নেই। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। এই অবস্থায় অসহায় বৃদ্ধার পঞ্চাশোর্ধ্ব ছেলে যদি তাঁর চোখের সামনে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যায়, মা কী করবেন? কিছুই করতে পারবেন না। ভারতের কোচবিহারের ছায়ারানি আচার্যও পারেননি।
টানা অন্তত তিনদিন চোখের সামনে ছেলের দেহের দিকে শুধু তাকিয়ে থেকেছেন, উঠে গিয়ে একবার ছুঁতে পারেননি, চেঁচিয়ে লোক ডাকারও সাধ্য হয়নি। শনিবার সকালে প্রবল দুর্গন্ধ পেয়ে কোচবিহার শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ম্যাগাজিন রোডের আচার্যবাড়ির সামনে প্রতিবেশীরা জড়ো হন। বিস্তর ডাকাডাকিতেও বাড়ির কারও সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে যখন দরজা ভেঙে ছায়ারানিদেবীর ছেলে বিশ্বজিৎ আচার্যর (৫৩) দেহ বিছানা থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠাল, দেহে রীতিমতো পচন ধরে গেছে।
ছায়ারানিদেবীকে ভর্তি করা হয় কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, অন্তত তিনদিন আগে বিশ্বজিৎবাবু মারা গেছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরসভার অস্থায়ী কর্মী বিশ্বজিৎবাবু ছিলেন নেশাসক্ত, যে কারণে স্ত্রী এবং সন্তান তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে তিনি একাই থাকতেন, পাড়ায় সেভাবে মেলামেশাও ছিল না।
তার জামাই প্রশান্ত সাহা জানান, নেশাসক্তির জন্য স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে বিশ্বজিৎবাবুর যোগাযোগ ছিল না। তবে এমন কাণ্ড ঘটবে, তাদের কল্পনাতেও ছিল না।
কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, “এক ব্যক্তির পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক সময় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যাবে। মৃতের মাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিএ/