চাঁপাই ব্যুরো: চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসতালে ফ্যাকো ও লেজার মেশিন কেনার পর রোগিদের কোনো কাজেই আসেনি। কারিগরি ত্রুটি থাকার কারণে মেশিন দুটি অকেজো হয়ে আছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে হাসপাতাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার কমিটির একাংশের।
তারা বলছেন- কেনার সময় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিম্নমানের মেশিন কেনা হয়েছিল। কার সে কারণেই মেশিনগুলো ব্যবহার করা যায়নি। এ জন্য তারা সাধারণ সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম ফিকসনকে দায়ী করেছেন। যদিও খাদেমুল ইসলাম দাবি করেছেন মেশিন কেনায় দুর্নীতি হয়ে থাকলে এর জন্য দায়ী সমাজ সেবা অধিদপ্তর।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৪ সালে কেনা হয় একটি ফ্যাকো মেশিন ও একটি লেজার মেশিন। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীন এক কোটি ৬৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় অন্য কিছু যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের সঙ্গে কেনা হয় মেশিন দুটি। কিন্তু প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে কেনা মেশিন দুটি ব্যবহারই হয়নি হাসপাতালে। কারিগরি ত্রুটি থাকার কারণে মেশিন দুটি ব্যবহার করা যায়নি, সবশেষ গত বছরের জুলাই মাসে মেশিন দুটি ঢাকায় পাঠানো হয় মেরামতের জন্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফ্যাকো মেশিনটি কিছুদিন ব্যবহার করা গেলেও লেজার মেশিনটি একেবারেই ব্যবহার করা যায়নি। সেটি কেনার পর থেকেই নানাবিধ ত্রুটি দেখা যায়।
অন্ধ কল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া জানান, মেশিন দুটি কেনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সমিতির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম ফিকসন। যেহেতু মেশিন দুটি কোনো কাজই করেনি, শুরু থেকেই ত্রুটি দেখা গেছে সেহেতু বোঝা যায় সেগুলো কেনার সময় দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে নিম্নমানের মেশিন কেনা হয়েছে। সম্প্রতি হাসপাতালে পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও একই অভিযোগ করেছিলেন ডিসেম্বরে মেয়ার শেষ হওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসিব ও সদস্য সাইদুর রহমান। তারা অভিযোগ করেছিলেন, শুধু মেশিন দুটিই নয়, আসবাবপত্র ক্রয়েও দুর্নীতি করা হয়েছে।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে সমিতির সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই এ নিয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, ওই প্রকল্পের অন্তত ৩০ লাখ টাকা ‘ছয়-নয়’ হয়েছে। অকেজে মেশিন দুটি ক্রয়ে দুর্নীতিতে অন্ধ খাদেমুল ইসলাম ফিকসনের জোগসাজস রয়েছে। ওই দুর্নীতিসহ আরো কয়েকটি অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে নির্বাহী কমিটির ১৪ জন্য সদস্য একমত পোষন করে সাধারণ সম্পাদককে তার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতেও বলেছিল।
এ দিকে লেজার মেশিন ও ফ্যাকো মেশিন কেনার দুর্নীতি প্রসঙ্গে খাদেমুল ইসলাম ফিকসন বলেছেন, প্রকল্পে যদি দুর্নীতি হয়েছে থাকে তবে সেটি করেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম। কারণ তিনি ওই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। ওই দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম দাবি করেন, একটি গ্রহন কমিটি গঠন করে ওই সময় প্রকল্পের যাবতীয় আসবাবপত্র ও মেশিন বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই গ্রহণ কমিটিতে ছিলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আয়াজ উদ্দীনেরও। তবে আসবাবপত্র ও মেশিন কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ