খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: বিশ্বের ৩৬টি দেশের গুমবিষয়ক ৪২০টি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জেনেভায় বৈঠকে বসছে গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ।
আগামী সোমবার থেকে ১০ দিনের রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে জাতিসংঘের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ ‘গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের স্বজন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে গুমের অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য শুনবেন।
গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের ১১৮তম অধিবেশনের আওতায় এসব বৈঠক সম্পর্কিত তথ্য আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪২তম অধিবেশনে প্রতিবেদন আকারে উত্থাপিত হবে।
আসন্ন বৈঠকে যে ৩৬টি দেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আছে কি না জানতে চাইলে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা জেরেমি লরেন্স গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে জানান, পুরো প্রক্রিয়াটি গোপনীয়। তাই কোন দেশের এবং কোন গুম করার অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে তা তাঁরা প্রকাশ করবেন না।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আসন্ন বৈঠকে বাংলাদেশে গুমের অভিযোগগুলোও যথাযথ প্রক্রিয়ায় পর্যালোচনা করা হবে।
সরকারি সূত্রগুলো এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করে বলেছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার জেনেভায় মানবাধিকারবিষয়ক কাঠামোর বৈঠকগুলোতে গুম নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বাংলাদেশের অবস্থান হলো, এ দেশে গুম বলে কিছু নেই।
জানা গেছে, ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে অন্তত সাত দফা চিঠি পাঠিয়েছে গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ। গত বছরের ৬ জুন গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস-চেয়ার অ্যালিনা স্টেইনার্টসহ সাতজন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশকে পাঠানো এক চিঠিতে মাদকবিরোধী অভিযানে ১৩২ জনেরও বেশি নিহত, ১৩ হাজারেরও বেশি গ্রেপ্তার এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তি গুম হওয়ার
অভিযোগ তুলে ধরে। ওই চিঠিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার অনুরোধ জানান।
এরপর গত বছরের ২৭ আগস্ট হাসিনুর রহমান নামে সাবেক এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার কথিত অপহরণ ও নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘের গুমবিরোধী ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরে। গত নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম হওয়ার অভিযোগ অব্যাহত থাকায় এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের চিঠির জবাব না দেওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো হয়। ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সফরে আসতে আগ্রহী, কিন্তু বাংলাদেশ তাতে সম্মতি জানায়নি।
২০১৫ সালে ঢাকায় কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের গুমবিরোধী দিবস পালনের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশকে চিঠি পাঠায়। জেনেভায় বাংলাদেশ দূতাবাস এরপর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে চিঠি দিয়ে জানায় যে বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তাদের ওই চিঠির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের চিঠিগুলোর বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের গুম হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন