নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান ছুটি পেয়ে অবসরে বসে না থেকে সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে ফুল ও সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন রাজশাহী মহানগরীর খড়খড়ি বাইপাস এলাকার কলেজ শিক্ষক জামাল উদ্দিন। পড়ে থাকা পতিত জমিতে নার্সারি গড়ে তুলে এখন তিনি সেখান থেকে আয় রোজগারও করছেন। এখন সেখানে শুধু ফুলের সমারোহ। নার্সারিতে এখন প্রায় ১৫ ধরণের ফুল রয়েছে। অর্থ লগ্নি করে নার্সারি গড়ে এখন সেই ফুল বিক্রি করে অর্থ রোজগার করছেন। শিক্ষকতার পাশপাশি করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অবসর সময়ে প্রায় ৯ মাস আগে থেকে তিনি এই সবজি ও ফুল বাগান তৈরি করেন। তিনি রাজশাহী পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন।
নগরীর খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় অবস্থিত তার নার্সারিতে গিয়ে সরজমিনে তার কথা কথা হলে তিনি জানান, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা সংক্রমণ যাতে অধিকহারে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য স্কুল-কলেজ সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়। কলেজ বন্ধ হওয়ার পর অবসর সময় পেয়ে তিনি বাড়ির পাশে পড়ে থাকা পতিত জমিতে সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই মাস থেকেই তিনি বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ শুরু করেন। তিনি বেগুন, ঢেঁড়শ, করলা, কাঠুয়া, শাকসহ প্রায় ২২ ধরণের সবজি চাষ করেন। প্রচুর পরিমাণে সবজিও ফলে জমিতে। করোনাকালীন
পরিস্থিতে চারিদিকে মানুষের অভাব অনটন শুরু হওয়ায় উৎপাদন হওয়া সবজি তিনি বিক্রি করেননি। অসহায় গরীব মানুষ ও প্রতিবেশীদের মাঝে সেই সবজি তিনি বিতরণ করেন। আগস্ট মাস পর্যন্ত সবজি হয় ও তিনি তা বিতরণ করেন। পুরো জমির সবটুকু সবজি তিনি বিতরণ করে দেন। যখন থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে তখন থেকে ক্লাস নেওয়ার পর বাকি সময় সবজি বাগানে পরিশ্রম করতেন।
এরপর সবজি চাষে আগ্রহ দেখে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই তাকে ফুল চাষের পরামর্শ দেন। আগস্ট মাসের পর থেকে সেই জমিতে প্রায় ১৫ রকমের ফুল চাষ শুরু
করেন। ফুলগুলোর মধ্যে রয়েছে গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া, গোলাপ, ক্যালেনদোলা, কসমন ও চায়না ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ফুল। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে বীজ ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেন নার্সারি তৈরিতে।
প্রায় ৪ মাস আগে শুরু করা সেই নার্সারি এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। গত ১ মাস থেকে তিনি ফুল বিক্রি শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৮০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। বাগানে আরো অনেক ফুল রয়েছে। প্রতিদিনই ফুল বিক্রি হচ্ছে। সব ফুল বিক্রি হলে লাখ টাকার উপরে ফুল বিক্রি হবে। ফুল চাষ করে অবসর সময় কাটানোর পাশপাশি তিনি আয় রোজগার করতে পারার কারণে অনেক দেশি ও বিদেশী বিভিন্ন
জাতের দামি ফুল চাষের চেষ্টা করছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে তিনি তার নার্সারিতে অনেক ফুল ফোটাতে পারবেন বলে জানান। তিনি তার নার্সারির নাম দিয়েছেন ইত্যাদি নার্সারি। নগরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা গিয়ে তার ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
কলেজ শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে প্রথমে সবজি ও পরে ফুল চাষ করেছি। সবজি চাষ করলেও করোনাকালীন হওয়ার কারণে বিক্রি করেনি। অসহায় ও কম আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছি। ফুল চাষের খরচ
বাদেও এখন অনেক টাকার ফুল বিক্রি করেছি। এখন আরো বিভিন্ন ধরণের ফুল চাষের চেষ্টা করছি। এখন থেকে সবজি ও ফুল চাষ অব্যাহত রাখবো। যারা অবসর বসে আছে বা চাকুরী খুঁজছে তারাও এমন ফুল ও সবজি চাষ করে নিজেই স্বাবলম্বি হতে পারে। তাহলে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশপাশি অর্থনৈতিকভাবে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।
এস/আর