খবর২৪ঘণ্টা.কম: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘এমন নির্বাচন স্বাধীনতার পর আর দেখি নাই। বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলা, তাদের কর্মী-সমর্থকদের এমনকি স্ত্রী-সন্তানদেরও পাইকারি হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের একচোখা নীতি, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ- এমন নির্বাচন এ দেশে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’ তিনি ভোট সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন। ভোট সামনে রেখে দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা এখন যাদের আওয়ামী লীগ বলছেন, তারা আর সেই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ না। তিনি পুলিশ বাহিনীকে সে অর্থে কিছু বলেননি।
তিনি আরও বলেন, ‘সামরিক সরকারের আমলে ’৮৬ এবং ’৮৮ সালের নির্বাচন দেখেছি। ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ৫ জানুয়ারির দুটি ভোটারবিহীন নির্বাচনও দেখেছি। কিন্তু অতীতের এসব নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে এবারের নির্বাচন। এ নির্বাচনে শুধু সরকার আছে, আর সরকারি দলের প্রার্থীরা আছে। বিরোধী দল মাঠে থাকলেও তাদের নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে, ঘর থেকেই বের হতে দিচ্ছে না।
বুধবার মতিঝিলের চেম্বারে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই নির্বাচনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকাসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। ড. কামাল হোসেন এ সময় ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের কার্যকলাপে সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা আছে। এই আশঙ্কা সরকার এবং নির্বাচন কমিশন মিলেই জনমনে তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটে থাকতে হবে। জনগণকে নিয়ে ভোটের মাঠে টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। সরকারি দল যাতে না বলতে পারে যে, আমরা সরে গেছি। জনগণকে বোঝাতে হবে ভোট আমাদের অধিকার। আমরা কেন সরে যাব? আর শেষ পর্যন্ত যদি সরকার ভোটের মাঠে আমাদের টিকে থাকাটা অসম্ভব করে দেয়, তখন দেশের মানুষই দেখবে।’
মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকে ড. কামাল হোসেন পুলিশকে ‘জানোয়ার’ বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই অর্থে তো বলিনি। আমি সবসময় বলেছি, ’৭১ সালের সেই কালো রাত্রিতে পুলিশ বাহিনী প্রথম পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। জীবন দিয়েছিল। সেই বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। দলীয় স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অন্যায়। এটা হতে পারে না। পুলিশ জনগণের। তাদের জনগণের বিপক্ষে দাঁড় করানো ঠিক হবে না।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মানুষের মতো ভূমিকা রাখবে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। দলীয় বাহিনীতে পরিণত হবে না। আমরা সবাই সেটাই আশা করি।’ তিনি আরও বলেন, যেভাবে পাইকারি হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এটা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। সরকারের কার্যকলাপে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো দাবি নয়, এটা সংবিধানই নিশ্চিত করেছে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, আমার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ উদ্বিগ্ন। আমি তাদের বলেছি, আমার নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ভোটের আর মাত্র তিন দিন বাকি, এখনও ধানের শীষের প্রার্থীদের ধরপাকড় চলছে, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ওপরও হামলা হচ্ছে। গ্রেফতার চলছে। গণমাধ্যম কর্মীরাও হামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ডিএমপি কমিশনারকে বলেছি এসব বন্ধ করুন।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সত্তরের নির্বাচনেও বাধা এসেছে। আমরা মাঠ ছাড়িনি। সামরিক সরকারের আমলের নির্বাচনগুলোতেও বাধা এসেছে, আমরা পিছু হটিনি। এবারও পিছু হটবো না। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকব। এরপরও যদি সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়, ভোটে কোনো অনিয়ম হয়, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই রুখে দাঁড়াব। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ভোট সামনে রেখে দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা যাদের এখন আওয়ামী লীগ বলছেন, তারা আর সেই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ না। ক্ষমতা আর নিজের আখের গোছাতে এরা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করছে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ভোটকে প্রহসনে পরিণত করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এভাবে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে না। আওয়ামী লীগের নামে যারা এভাবে হামলা করছে তাদের খুঁজে বের করা দরকার। তাদের পরিচয় জানাটা জরুরি।’ সূত্র: যুগান্তর
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন