ওমর ফারুক : আর মাত্র কয়েকদিন পরেই উদযাপিত হবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। এ ঈদে মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করে থাকে। কোরবানির জন্য প্রয়োজন হয় ধারালো ছুরি, চাকু, চাপ্পড়, দাসহ বিভিন্ন হাতিয়ার। এ জন্য এ সময়টাতে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের। তারা এ সময় কাজ করে বছরের অন্য সময়ের লোকসান পুষিয়ে নেন। কিন্ত এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কামারপাড়ায় অন্য বছরের মতো নেই তেমন ব্যস্ততা। অনেককেই অবসর সময় কাটাতে হচ্ছে। তারা যেমন আশা করেছিলেন ঈদের আগ মুহূর্তে তারা কাজ করে বছরের অন্য সময় বসে থাকা লোকসান পুষিয়ে নেবেন। কিন্ত করোনা পরিস্থিতির কারণে আর সেই আশা পূরণ হচ্ছেনা। কাজ না থাকায় অর্থ সংকটের মধ্যে পড়বেন কামারগণ এমনই কথা বলছেন তারা। সরজমিনে নগরীর বিভিন্ন কামার পল্লী ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরগুলোতে ২৫-২৫ দিন আগে থেকে কামাররা ছুরি-চাকু তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর ঈদ ঘনিয়ে আসায় কোরবানির পর মাংস কাটার কাজে
লাগা ছুরি-চাকুসহ অন্যান্য হাতিয়ার তৈরির জন্য কামারের দোকানে ভিড় জমান মুসলমানরা। আর কাজ বেশি থাকায় অবসরের সময় থাকতোনা তাদের। দিন রাত শুধু কাজ আর কাজ। বেশি সময় কাজ করে বছরের অন্য সময়ের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিতেন।
কিন্ত এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দুই মাস তারা দোকান খুলতে পারেননি। এরপর দোকান খুললেও তেমন কাজ ছিলনা। অবসর সময় পার করেছেন তারা। কিন্ত আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে, ঈদের আগে সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। কিন্ত না তাও সম্ভব হচ্ছেনা। ঈদের মাত্র হাতে গোনা কয়দিন বাকি থাকলেও এখনো তেমন হাতে কাজ নেই।
কোন কর্মর্কার কাজ পেলেও তা আশানুরুপ নয়। এ কাজ দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছেনা তাদের। এ কারণে যে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের। কেউ কেউ
নতুন হাতিয়ার বানিয়ে নেন আবার কেউ কেউ পুরাতনগুলোকেই ধার দিয়ে নেন হাতিয়ারগুলোর মধ্যে উলে¬খযোগ্য হচ্ছে, দা, ছুরি, চাকু, চাপ্পড়, হাসুয়া, কুড়াল, কানতাইসহ আরো অনেক যন্ত্রপাতি। এবার আগে তেমন ভিড় না থাকলেও গত দুই/একদিন ধরে কিছু কাজ পাচ্ছেন তারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষ এবার কোরবানি দিতে পারবেন না আবার অনেকে দিলেও নতুন ছুরি-চাকু তৈরিতে অনীহা
তাদের। এ কারণেই কাজ কমছে বলে ধারণা করছেন কামাররা।
রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর এলাকার নিতীশ নামের এক কামারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছর ১৫ দিন আগে থেকেই তার দোকানে ছুরি-চাকু ছাড়াও গরু জবাইয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার তৈরিতে ভিড় করতেন ক্রেতারা। কেউ কেউ আবার পুরাতন ছুরিকেই ধার দিয়ে নিতেন। বছরের অন্য সময়গুলোতে তেমন ভিড় থাকে না। এ সময়টাতে একটু বেশি কাজ হয়। কাজ বেশি হওয়ার কারণে অন্য সময়ের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। তবে এবার আশানুরুপ কাজ নেই। কাজ বেশি না থাকার কারণে অনেক সময় অবসর বসে থাকতে হচ্ছে। অন্য বছর দিনে ৩০/৪০টা কাজ করলেও এবার ১০/১৫টি কাজ পাওয়া যাচ্ছে।
নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার উপেন নামের এক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ বছর আমরা সবদিক দিয়েই সমস্যার মধ্যে আছি। আগে দোকান খুলতে পারিনি আর এখন দোকান খুলতে পারলেও বেশি কাজ নেই। এ কারণে বাড়িতে আয় হবে না। ঈদের আগ মুহূর্তে ছাড়া বছরের অন্য সময় তেমন একটা কাজ থাকেনা বললেই চলে। দিনের বেশির ভাগ সময় বসেই কাটাতে হয়। এখন নতুন হাতিয়ার তৈরির পাশাপাশি মুসলমানরা
পুরাতন হাতিয়ারগুলো ধার দিয়ে নিচ্ছেন। কাজ বাড়ায় আয়ও বেড়েছে। নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার এক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঈদের কারণে বর্তমান সময়ে অনেক বেশি কাজ হচ্ছে। অগে দিনে সর্বোচ্চ দু’চারটি কাজ হতো তাও টানাটানি। কিন্ত গত সপ্তাহ থেকে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ১৫/২০ টি কাজ করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হাতিয়ার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। শেষ সময়ে ভিড় একটু বেশি হচ্ছে। এসব এলাকা ছাড়াও নগরীর অন্যান্য এলাকা এবং জেলার উপজেলাগুলোতে কামারদের হাতেও তেমন বেশি কাজ নেই বলে শোনা গেছে।
এমকে