খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: এবারও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের দায়সারা গোছের প্রস্তুতি, প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্রের অপতৎপরতা, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও আস্তার সংকটের কারনেই প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ পুনরায় ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এ উদ্যোগ সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের তরফ থেকে।
প্রত্যাবাসনের দৃশ্যমান প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল থেকে টেকনাফ উপজেলার শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের মত যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাস কমিশন কার্যালয়।
সেখানে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ২১টি পরিবারের মতামত গ্রহন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শালবাগান এলাকার ২৬ নং শিবিরের ইনচার্জ মোঃ খালিদ হোসেন।
এসময় কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরতে অনীহার কথা জানায় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। আজও রোহিঙ্গাদের মত যাচাইয়ের কাজ চলছে।
অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক হলেও প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র তাদের মাথায় কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা প্রত্যাবাসন বিঘ্নিত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। কিছু বিদেশি সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিয়ানমারের ফেরার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে নিরুৎসাহিত করছে। মিয়ানমারের আন্তরিক সদিচ্ছার অভাব এবং কিছু বিদেশি এনজিওর প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতার কারনেই গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রথম দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছিলো। তখন শেষ মুহুর্তে গিয়ে ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে অনীহার কথা জানায় এবং প্রত্যাবাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এবারও সেই পরিস্থিতি তৈরির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
আলাপকালে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা মিয়ানমারের বুচিডং চাংচিপ্রাং এলাকার বাসিন্দা, বর্তমানে শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের এ-ব্লকে বসবাসকারি মোঃ জুবাইর বলেন, ইউএনএইচসিআর এর একটি প্রতিনিধি দল সকালে এসে পারিবারিক ডাটা কার্ড খুঁজে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কিছু জানায়নি। পরে জানতে পারি প্রত্যাবাসনের তালিকায় আমার নাম রয়েছে। আমি নিজের দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে আছি। নাগরিকত্ব, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, অবাধ চলাফেরা ও নিরাপত্তা দিলেই ফিরব। এভাবে যাব না।
তালিকায় থাকা আরেক রোহিঙ্গা হাসিনা বেগম বলেন, ওখানে গেলে আমাদের আশ্রয় শিবিরে রাখবে। অবাধ চলাফেরা করা যাবেনা। রোহিঙ্গা স্বীকৃতি দেবেনা। তবে কেন আমরা স্বদেশ ফিরব?
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে সংশয়ের কথা ফুটে উঠে শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের মোহাম্মদ আবুল কালামের কথায়ও। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ঘরে-ঘরে গিয়ে বলেছি, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে রাজি হয়েছে এবং সকল দাবি মেনে নিয়ে তাদের ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু এই কথাগুলো তাদের বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের এই বার্তা গুলো পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি অব্যাহত রাখব। তারা হয়তো এক সময় বুঝে নিজ উদ্যোগে তাদের দেশ মিয়ানমারে চলে যাবেন। এর আগে তাদেরকে কোন মতেই জোর করে পাঠানো হবে না।
মোহাম্মদ আবুল কালাম আরও বলেন, মিয়ানমারের ছাড়পত্র দেয়া তালিকা অনুযায়ী ৩ হাজার ৫৪০ জনের মত যাচাইয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৮টি দলের সদস্যরা বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহন করছেন।
জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন