পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রস্পেক্টাস ও পাঠ পরিকল্পনা বিক্রি করে দিতে রাজি না হওয়ায় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান ও উপাধ্যক্ষ আব্দুল জলিলকে মারধর করেছে ঈশ্বরদীর ছাত্রলীগ নেতারা। এসময় অধ্যক্ষের কক্ষের টেবিল, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কসহ আসবাব পত্র ভাংচুর ও কাগজপত্র তছনছ করে কলেজে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা।
ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার আরমান, সাধারণ সম্পাদক
সাব্বির হাসানসহ প্রায় ৪০ জন ক্যাডারসহ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে এসে তার ওপর চড়াও হয়। প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালি, পরে টেবিলের কাঁচসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাংচুর ও এক পর্যায়ে সেখানে থাকা উপাধ্যাক্ষ ও বেশ কয়েকজন শিক্ষকদের টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে অধ্যক্ষকে তারা লাঠি ও বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এসময় কয়েকজন শিক্ষক তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে ছাত্রলীগ নেতারা তাদেরও মারধর করে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের করে দেয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) বিকেলে কলেজে এ ঘটনা ঘটলেও একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া কার্যক্রম চলার কারনে ঘটনাটি
কাউকে জানাতে চায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে রাতেই অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুস সবুর খান বাদী হয়ে উল্লেখিত ছাত্রলীগ নেতারা ছাড়াও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৭৯। তারিখ: ২৮-০৬-২০১৮)। মামলাটি রেকর্ড হয় রাত ১টার পরে। তবে লিখিত এজাহার থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির লাইনটি বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সকালে বিষয়টি সবার আলোচনায় আসে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে অস্ত্রসহ রণমূর্তি ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর এভাবে চড়াও হয়ে মারধর করার ঘটনায় তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষকে প্রায় ১ ঘন্টা তার কক্ষে অবররুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগ নেতারা। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসিসহ পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুস সবুর খান এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, সরকারী নিয়ম বহির্ভূতভাবে অবৈধ প্রস্পেক্টাস ও পাঠ পরিকল্পনা বিক্রি করে দিতে তারা আমাকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছিল। আমি তাদের অন্যায় আবদার রাখতে পারিনি বলে ছাত্রলীগ নেতারা আমাকে, উপাধ্যাক্ষ আব্দুল জলিলসহ কয়েকজন শিক্ষককে শারিরিকভাবে মারধর করেছে এবং তাদের
কথামত প্রস্পেক্টাস বিক্রি করে না দিলে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার পাশাপাশি রাস্ট্রীয় সম্পদেরও ক্ষতি করেছে।
ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনিসহ অন্যান্যদের বারবার মোবাইলে কল করলেও তাদের কারো মোবাইল বন্ধ, কারোটা বাজলেও ফোন রিসিভ করেনি তারা। বিস্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, তারা সবাই গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছে।
এ ঘটনা সম্পর্কে পাবনা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম বলেন, যারাই এ ঘটনা ঘটাক না কেন তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে মামলা গ্রহণ করে আসামীদের গ্রেফতার করতে ঈশ্বরদী থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দীন মামলা রেকর্ড হয়েছে স্বীকার করে বলেন, যারা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে তাদের গ্রেফতার করতে ইতিমধ্যে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।
এদিকে এ ঘটনায় ঈশ্বরদীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও ছাত্রলীগের এসব নেতা-কর্মীরা ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপির আশির্বাদপুষ্ট বলে প্রকাশ্যে এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেননা। বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এরা ভূমি মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়লেও এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস দেখাননা কেউ।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ