ওমর ফারুক : করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহীর মার্কেট ও দোকানপাট। এ কারণে সুবিধা করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। আর তখনই নগরের সকল সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নগর ছেড়ে চলে যায় পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে আরো ফাঁকা হয়ে পড়ে নগর। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খুলে দেওয়ার পর কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্ত ঈদুল ফিতরের পর সরকার লকডাউন শিথিল করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সকল মার্কেট ও দোকানপাট খুলে দেয়। শুধু বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তখন থেকে নগরের জীবনমান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও
বাইরের মানুষ শহরে না আসায় তেমন মানুষের আনাগোনা নেই। করোনাকালীন সময়ে কাজকর্ম কম থাকায় মানুষের মধ্যে অর্থ সংকট বেড়েই চলেছে। এর উপর আবার বন্যার প্রকোপ। নগরের কাপড় ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন গত ঈদে বেচাকেনা না করতে পারলেও ঈদুল ফিতরে ব্যবসা করে লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিবেন। কিন্ত না সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছেনা ব্যবসায়ীদের। ঈদ-উল আযহার আর মাত্র ৫ দিন বাকি থাকলেও বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ক্রেতাদের দেখাই পাচ্ছেননা ব্যবসায়ীরা। নগরের প্রত্যেকটা মার্কেট ক্রেতাশূণ্য। ক্রেতা না থাকায় সন্ধ্যার পরেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে মার্কেট। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ব্যবসায়ীরা ঈদের ২০-২৫ দিন আগে থেকে প্রচুর বেচাকেনা করতেন। ক্রেতাদের সাথেও তেমন দরদাম করার সুযোগ পাননি তারা। অথচ এখন দোকানে বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন ক্রেতারা।
সরজমিনে গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার কাপড় পট্টি, আরডি মার্কেট, গণকপাড়া, সোনাদিঘীর মোড়সহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি মার্কেট ছিল ক্রেতাশূণ্য। দোকানগুলোতে খুবই কম সংখ্যক ক্রেতা রয়েছেন।
কাপড়পট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু নারী ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাক দেখছেন। ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি না থাকায় দোকানের কর্মচারীদের মধ্যেও তেমন ব্যস্ততা নেই। সুযোগ পেয়ে ক্রেতারাও সময় নিয়ে পছন্দের কাপড় কিনছেন। বিশেষ করে এখন থ্রি-পিস
ও শাড়ি বেশি কিনছেন নারীরা। পুরো কাপড় পট্টি ঘুরে তেমন ক্রেতা যায়নি। কাপড় পট্টির এক ব্যবসায়ীরা সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ঈদে ব্যবসা করতে পাইনি। মনে করেছিলাম এই ঈদে মার্কেট খোলা রয়েছে পূর্বের লোকসান পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। কিন্ত না তা হচ্ছেনা। ঈদ আসন্ন হলেও মার্কেটে ক্রেতা নেই বললেই চলে। বসে বসে সময় কাটাতে হচ্ছে। দু’একজন ক্রেতা আসলেও তেমন বেচাবিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতা না থাকার কারণে সন্ধ্যার পরই দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি।
আরেক ক্রেতা বলেন, আগেতা লোকসান হয়েছে। কিন্ত এখন মার্কেট খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। এমন চলতে থাকলে ও ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দেয়াই সমস্যা হয়ে পড়বে। ক্রেতা কেন কম হচ্ছে বলে মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, মানুষের মনে শান্তি নেই। কারো কারো কাছে টাকা নেই। যাদের টাকা আছে তাদের অনেকে করোনার ভয়ে বের হচ্ছেন না।
সোনাদিঘীর মোড়ের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে পূর্বের লোকসান তুলে নিতে পারি। কিন্ত এ বছর ব্যবসা নেই বললেই চলে। এখন পর্যন্ত আশানুরুপ ব্যবসা হচ্ছে না।
নগরীর সবচাইতে জনাকীর্ন আরডি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও তেমন ক্রেতারে উপস্থিতি নেই। মার্কেটের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক ক্রেতা যায়। অনেক দোকানে কোন ক্রেতাকেই দেখা যায়নি। এই মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বেচাকেনা একেবারেই নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা ব্যবসায়ীরা সমস্যার মধ্যে পড়বো। করোনার ভয়ে ও অর্থ না থাকার কারণেই ক্রেতারা আসছেন না বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
শুধু কাপড় ব্যবসায়ীরা নয় অন্য মার্কেটগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তেমন বেচাকেনা কোথাও নেই। নামি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে এবার তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। তবে এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পুরাতন কাপড় দিয়েও ঈদ করা যাবে। কিন্ত করোনা হলে সমস্যা। তাই হয়তো বাজারে ক্রেতা কম।
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলা ও মহানগর মিলিয়ে বর্তমানে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ২ হাজারর ৬৬৯ জন। মারা গেছে ২২ জন ও সুস্থ হয়েছে ৯৫৯ জন।
এমকে