খবর২৪ঘন্টা আর্ন্তজাতিক ডেস্কঃ
স্বজন হারানো মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার পেরদানাকুসুমাহ বিমানবন্দরের পরিবেশ। সোমবার ১৮৯ জন আরোহী নিয়ে লায়ন এয়ারের একটি বিমান জাভা উপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। এরপর থেকে ওই আরোহীদের স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনার পর কারো কোনো খবর জানতে পারছেন না তারা। তবু প্রিয়জন বেঁচে আছেন, এমন আশায় দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন কেউ কেউ। কেউবা বুক চাপড়ে কাঁদছেন।
তাদেরই একজন ছাব্বিশ বছর বয়সী কেজিয়া সারোয়িনসং। তার ছোটভাই হিজকিয়া জোরি সারোয়িনসং (২৩) ছিলেন ওই বিমানে। বিমানটি উড্ডয়নের পর ভাইয়ের সঙ্গে তার আর কোনো কথা হয় নি। তবু শোকে বিহ্বল কেজিয়া সারোয়িনসং মাথা নিচু করে হালিম পেরদানাকুসুমাহ বিমানবন্দরের সামনে অপেক্ষা করছেন। আশা, যদি ছোট ভাইটির কোনো খবর জানতে পারেন। একই বিমানে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়ায় পড়ুয়া হিজকিয়া বাংকা বেলিতুং দীপের পাংকাপিনাং। অলাভজনক একটি যুব সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে তার যোগ দেয়ার কথা ছিল।
ঘুরে বেড়াতে খুব ভালোবাসতেন হিজকিয়া। ভ্রমণ পিপাসু হিজকিয়া স¤পর্কে বোন কেজিয়া জাকার্তা পোস্টকে বলেন, সে সব সময় ঘুরে বেড়াতো। গত সপ্তাহেই সে বানদাং থেকে ফিরেছে। সকালে বিমানে যাত্রা করার আগে তার অবস্থান স¤পর্কে পরিবারের সদস্যদের গ্রুপ চ্যাটে অবহিত করে। আর এটাই তার কাছ থেকে জানা আমাদের শেষ তথ্য।
বিধ্বস্ত হওয়া বিমানে ছোটভাইটি থাকলেও কেজিয়া আশায় বুক বেঁধে আছেন যে হিজকিয়া অবশ্যই বেঁচে আছেন। কিন্তু ক্ষণকাল বাস্তবতা স্মরণ করে তিনি চুপ করে যান। তিনি নিজেও জানেন হিজকিয়ার ফিরে আসার সম্ভবনা অতি ক্ষীণ।
হিজকিয়ার মতো এমনই আরেক হতভাগ্য যাত্রী ম্যান সিহোমবিং। তিনি পাংকাপিনাং এ ডিপাটি আমির বিমানবন্দরের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ জাকার্তায় থাকতেন তিনি। এ জন্য জাকার্তা থেকে পাংকাপিনাং যাতায়াত ছিল তার প্রতি সপ্তাহের রুটিন। কিন্তু এ সপ্তাহে পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। তাই এ সপ্তাহে তার বাড়ি ফেরাটা সবার কাছে বিশেষ ছিল।
জে টি ৬১০ বিমানটি নিখোঁজের সংবাদ রামলান মানিকের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। তার জামাই রুডি লুমবানতোরুয়ান। মাত্র দুদিন আগেই তিনি স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে ১১তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন। শ্যালিকাকে বলা তার শেষ কথাটিই এখন রামলানের কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বার বার। শ্যালিকার বিয়ে উপলক্ষে এক জোড়া জুতা উপহার দিয়ে বলেছিলেন, এই নাও তোমার বিয়ের উপহার। আমি তোমার বিয়েতে উপস্থিত নাও থাকতে পারি। কারণ আমি আমার বাৎসরিক সব ছুটি নিয়ে ফেলেছি।
হিজকিয়া ও রামলানের মতো বিমানবন্দরের সামনে ভীড় করা অসংখ্য স্বজন নীরবে কাঁদছেন। অপেক্ষায় আছেন প্রিয় মানুষগুলোর শেষ অবস্থা জানার জন্য। রাষ্টীয় মালিকানাধীন ক্রাইসিস সেন্টারে এসে তথ্য জানার জন্য শত শত মানুষ রেজিস্ট্রেশন করছেন। কিন্তু তাদেরকে জানানোর মতো কোনো তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছেও।
সোমবার ১৮৯ জন আরোহী নিয়ে জাকার্তা থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যায় জে টি ৬১০ ফ্লাইটটি। উড্ডয়নের মাত্র ১৩ মিনিট পরেই কন্ট্রোল প্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিমানটির।
খবর২৪ঘন্টা / সিহাব